হিংসা রুখতে ভাইরাল পোস্টে নজরদারি ‘টুল’ ব্যবহারে কলকাতা পুলিশ, কী ভাবে কাজ করবে?
আনন্দবাজার | ২৬ জুন ২০২৫
‘মন্দির’ শব্দটি টাইপ করলেই হবে। ‘মেটা কিওয়ার্ড’ হিসাবে শব্দটিকে বুঝে নিয়ে কম্পিউটার জানিয়ে দেবে, এমন শব্দ ঘিরে কী কী পোস্ট রয়েছে সমাজমাধ্যমে। এর সঙ্গেই ‘ভাঙচুর’, ‘নিগ্রহ’ বা ‘জুলুম’-এর মতো শব্দগুলি বসালেই সামনে চলে আসবে এ ব্যাপারে চিন্তিত হওয়ার মতো কোনও পোস্ট সমাজমাধ্যমে রয়েছে কিনা! একই ভাবে ‘মসজিদ’ বা কোনও ধর্মের নাম লিখে ‘সার্চ’ করলেও হবে! ‘ভাইরাল পোস্ট’ ঘিরে তৈরি হওয়া হিংসা রুখতে এখন এমনই পদক্ষেপ করার পথে কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, ভোটের আগে রাজনৈতিক দলগুলি যে ভাবে ‘সেন্টিমেন্ট অ্যানালিসিস টুল’ ব্যবহার করে ভোটারের মন বোঝার চেষ্টা করে, সে ভাবেই ‘ডেটা অ্যানালিসিস টুল’ ব্যবহার করে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল পোস্টের জল মাপতে চাইছে পুলিশ। আর তার ভিত্তিতেই তৈরি করতে চাইছে রণকৌশল।
গত কয়েক মাসে চাকরিহারা শিক্ষকদের আন্দোলন থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদ, রবীন্দ্রনগরের মতো জায়গায় হিংসার ঘটনা হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, পুলিশ কি এখন আর সময়ে খবর পায় না? পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝেও কেন পর্যাপ্ত পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়নি? বার বার কি পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য় ব্য়র্থ হচ্ছে? এ নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু হয়েছে বাহিনীর অন্দরেও। এই পরিস্থিতিতেই প্রযুক্তি কাজে লাগানোর ব্যাপারে আরও জোর দিতে চাইছে লালবাজার। তাতেই ‘ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স টুল’-এর মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের এক কর্তা বললেন, ‘‘রেল দুর্ঘটনা থেকে কাশ্মীরে পর্যটকদের উপরে হামলা, বিমান ভেঙে পড়া থেকে মন্দির নির্মাণ— সবেতেই সমাজমাধ্যমে আমরা মন্তব্য করে থাকি। এই ভাবে ধর্মভিত্তিক বা উস্কানিমূলক অনেক কিছু নিয়েও মন্তব্য, পাল্টা মন্তব্য চলতে থাকে। কখনও আবার সরাসরি মন্তব্য না করলেও কোনও বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে ‘লাইক’, ‘শেয়ার’ চলে। ডেটা অ্যানালিসিস টুল এই সব কিছুকেই পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে। মন্দির শব্দটি লিখে এই পদ্ধতিতে যদি সার্চ করা হয়, অ্যানালিসিস টুল দেখিয়ে দেবে, কোনও উস্কানিমূলক পোস্ট মন্দির নিয়ে করা হয়েছে কিনা। এতে অতি দ্রুত পদক্ষেপ করা সহজ হবে।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, এর সঙ্গেই এত দিন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ) সমাজমাধ্যমে নজরদারি চালালেও এ বার থেকে সাইবার অপরাধ দমন শাখাকে আলাদা করে সমাজমাধ্যমে নজরদারির দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। ভাইরাল হওয়া সমস্ত কিছু ঘিরেই সত্যাসত্য বিচার করে রিপোর্ট তৈরি করবে এই শাখা। তবে, জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের বিষয়ে সমাজমাধ্যমে নজরদারি চালাবে এসটিএফ-ই। যদিও থানা স্তরের পুলিশকর্মীদের অনেকেরই প্রশ্ন, গত কয়েক মাসে একাধিক ঘটনায় ‘স্পেশাল ব্রাঞ্চ’ (এসবি)-এর থেকে যথাযথ তথ্য না পাওয়ার কারণে ভুগতে হয়েছে। এই পদক্ষেপে সেই ঘাটতি ঢাকা যাবে কি?
কয়েক মাস আগেও থানা সামলানো, বর্তমানে অতিরিক্ত নগরপাল পদমর্যাদার এক পুলিশকর্মী বললেন, ‘‘স্পেশাল ব্রাঞ্চে শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে ধর্মভিত্তিক নানা সংগঠনের উপরে নজরদারি সংক্রান্ত আলাদা আলাদা শাখা থাকে। সকলের রিপোর্ট মিলিয়ে পুলিশি ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়। কিন্তু এখন বহু ক্ষেত্রেই যথাযথ রিপোর্ট আসছে না।’’ কেন? পুলিশের অন্দরের অনেকের দাবি, এসবি-তে বদলি হয়ে যাওয়া অনেকেই মনে করছেন, থানার মতো খাটনি সেখানে নেই। আরামের পোস্টিং ধরে নিয়েই কি তবে যথাযথ কাজ হচ্ছে না? কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা বললেন, ‘‘তেমন কোনও ব্যাপার নেই। সমস্ত রকম ভাবেই নজরদারি চলছে। আরও ভাল নজরদারির জন্যই নতুন নতুন পদক্ষেপের ভাবনা।’’