• ‘বৃষ্টি হবে’, ভবনের উদ্বোধন স্থগিত রাজ্যের আপত্তিতে
    এই সময় | ২৬ জুন ২০২৫
  • দেশের প্রধান বিচারপতি ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তরফে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার বিষয়ে সবুজ সংকেত পাওয়ার পরেই শুরু হয়েছিল প্রস্তুতি। আমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে বিলিও শুরু হয়ে গিয়েছিল। উদ্বোধনস্থল সাজিয়ে তুলতেও মাসখানেক আগে কাজ শুরু হয়েছিল।

    কিন্তু শেষমেশ রাজ্যের আপত্তিতে ১২ জুলাই হতে চলা কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবনের উদ্বোধন বাতিল করা হলো। রাজ্যের তরফে চিঠি দিয়ে ওই দিন উত্তরবঙ্গে প্রবল প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানানো হয়।

    অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষকে। সেই চিঠি পাওয়ার পরেই বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ প্রমাদ গুণতে শুরু করেছেন অনুষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে। আপাতত ১২ জুলাইয়ের উদ্বোধন স্থগিত করা হয়েছে। প্রশ্ন ঘুরছে রাজ্যের দেখানো কারণ নিয়েও।

    বর্তমানে জলপাইগুড়িতে জেলা পরিষদের একটি ভবনে অস্থায়ী ভাবে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চলছে। যদিও ২০১৭ সালেই সেখানে জাতীয় সড়কের ধারে সার্কিট বেঞ্চের স্থায়ী ভবন তৈরির জন্যে জমি দিয়েছিল রাজ্য সরকার।

    টাকাও বরাদ্দ করা হয় ভবন তৈরির জন্যে। বর্তমান প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের আমলে সেই কাজে গতি আসে। এ বছর ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর অবসরের আগেই নতুন ভবনের উদ্বোধন সেরে ফেলতে উৎসাহী ছিলেন হাইকোর্টের অফিসাররা।

    সেই অনুযায়ী, নবান্নের সঙ্গে আলোচনার পরে ২৩ মে দু’পক্ষের বৈঠকে ১২ জুলাই উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়। আমন্ত্রণপত্র ছেপে বিলি শুরু হয়। কলকাতা থেকে কোন কোন আইনজীবী ওই দিন সেখানে যেতে চান, সেই নামের তালিকাও চেয়েছিলেন হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ।

    এরই মধ্যে ভবন উদ্বোধনের জন্যে পূর্ত দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে মঞ্চের জায়গা চিহ্নিত করেন হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ। সেই জায়গায় সৌন্দর্যায়নের কাজে হাত দেয় পূর্ত দপ্তরও।

    কয়েক দিন পরে নবান্নের ঘনিষ্ঠ এক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা গোটা অনুষ্ঠানের তদারকির দায়িত্ব নিয়ে সেখানে যাওয়ার পরেই তাল কাটে বলে সূত্রের খবর। আগে যে জায়গায় মঞ্চ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ শুরু হয়েছিল, সেই জায়গা উপযুক্ত নয়—এই যুক্তিতে ওই সংস্থা অন্যত্র তা সরানোয় জোর দেয়।

    হাইকোর্টের তরফে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত এক অফিসার বলেন, ‘পূর্ত দপ্তর এবং হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের তরফে নবান্নের ঘনিষ্ঠ ওই সংস্থার যুক্তিতে প্রথমে আপত্তি করা হলেও কাজ হবে না বুঝে পরে চুপ করে যাওয়া হয়।’

    আর ঘটনাচক্রে তার কয়েক দিনের মধ্যে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয় উত্তরবঙ্গ জুড়ে। সেই বৃষ্টিতে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার চিহ্নিত জমির দফারফা হয়ে যায়। কাদা–জলে ভরে যাওয়া ওই জায়গা এই বর্ষার মরসুমে কতদিনে ব্যবহারযোগ্য হবে—তা নিয়ে সন্দিহান পূর্ত দপ্তরের ইঞ্জিনিয়াররাও। গত সপ্তাহে কাজ দেখতে যাওয়া সিনিয়র বিচারপতিরাও ধন্দে পড়েন।

    এই আবহেই মঙ্গলবার নবান্নের তরফে চিঠি দিয়ে জানানো হয়, ১২ জুলাই বৃষ্টি ও প্রবল দুর্যোগের আশঙ্কা রয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাসের একটি বুলেটিনও চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পরে বুধবার বিকেলে নবান্নের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন হাইকোর্টের বিচারপতিদের কমিটি।

    যদিও এ দিন নবান্নের অধিকাংশ অফিসার দিঘায় রথযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিলেন। ভিডিয়ো কনফারেন্সে তাঁদের সঙ্গে খুব ভালো ভাবে কথা বলতেও পারেননি হাইকোর্টের অফিসাররা।

    পরে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল নবনীতা রায় বলেন, ‘১২ জুলাইয়ের স্থগিত হওয়া অনুষ্ঠান আমরা ৬ সেপ্টেম্বর করতে চাই বলে রাজ্যকে জানানো হয়েছে।’ যদিও আদপেই সেই দিনটিতে রাজ্য সবুজ সংকেত দেবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ। রাজ্য এত দিন আগে কী করে এতটা নিশ্চিত হচ্ছে দুর্যোগ নিয়ে, তা নিয়েও ধন্দে আইনজীবীদের বড় অংশ।

  • Link to this news (এই সময়)