• অবসরের পরেও ক্লাস নিচ্ছেন তাপস স্যর, পারিশ্রমিক নেন না, শুধু পড়াতে চান বাচ্চাগুলোকে...
    এই সময় | ২৬ জুন ২০২৫
  • শিক্ষকতাকে ভালোবেসে, নিজের স্কুলকে ভালোবেসে, অবসরগ্রহণের পরেও বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়ে চলেছেন কাকদ্বীপের বামানগরের অঙ্কের মাস্টারমশাই তাপসকুমার পাড়ুই। বিদ্যালয়কে পড়ুয়াদের দ্বিতীয় বাড়ি বলা হয়। স্কুলজীবনের শিক্ষা, সকলের কাছে আগামীর পাথেয়। মা, বাবার পরেই আমাদের জীবনে শিক্ষক, শিক্ষিকার স্থান। তাঁদের শিক্ষাদান, জীবনব্রত বহু ছেলেমেয়ের চালিকাশক্তি। এ রকমই এক শিক্ষক তাপসকুমার পাড়ুই। তিনি শুধু তাঁর স্কুলের পড়ুয়াদেরই নন, সহকর্মী থেকে পরিচিত গণ্ডীতেও অনুপ্রেরণার অন্য নাম।

    বামানগরের বাসিন্দা তাপসকুমার পাড়ুই বামানগর সুবালা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিন দশক ধরে এই স্কুলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। ক্লাসরুম থেকে স্টাফরুম, তাঁর বড্ড চেনা। তাঁর অনেক কৃতী পড়ুয়া এখন কৃতিত্বের সঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছেন। সমাজেও নিজেদের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন।

    সেই ‘তাপস স্যর’ই গত ৩০ এপ্রিল কর্মজীবন থেকে অবসর নেন। তবে সেই অবসরগ্রহণের পরের দিন থেকেই স্কুলে যাচ্ছেন তিনি। একটাই ইচ্ছে, যত দিন পারবেন, পড়িয়ে যাবেন। তিনি জানান, বিনা পারিশ্রমিকে তিনি আবারও ক্লাস নিতে চেয়ে বিদ্যালয় পরিচালন কমিটির কাছে একটি আবেদনপত্র জমা দিয়েছিলেন। এই খবরে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। কারণ, তাপসবাবুর অবসরের পরে স্কুলে শিক্ষকের সংখ্যা দাঁড়ায় মাত্র ২৪ জন। যেখানে ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার।

    বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তপনকুমার মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের স্কুলে প্রায় আড়াই হাজার ছাত্রছাত্রী রয়েছে। ২৪ জন শিক্ষক ও শিক্ষিকা। তাপসবাবু অবসর নেওয়ার আগে ২৫ ছিল সংখ্যাটা। এত পড়ুয়া, সেখানে একজন শিক্ষক কমে যাওয়া মানেও অনেকটাই ঘাটতি। তাপসবাবু সেটা উপলব্ধি করেছেন এবং নিজেই এই বিদ্যালয়ে বিনা পয়সায় পড়াবেন বলে জানিয়েছেন। সেটাও বিনা পারিশ্রমিকে। আসলে স্কুলকে ভালোবেসে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলও তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। তাঁর ২৫টা ক্লাস তো নিচ্ছেনই। অতিরিক্তও নিচ্ছেন।’

    তাপসকুমার পাড়ুই বলেন, ‘১৯৯৩ সালে আমি এই স্কুলে যোগ দিয়েছিলাম। বিদ্যালয় আমার কাছে শুধুই কর্মস্থল নয়, এ আমার আনন্দ নিকেতন। ছাত্র ছাত্রীরা আমার সন্তানের মতো। যতদিন পারি, তাদের পড়িয়ে যাব।’ বিদ্যালয় পরিচালন কমিটিও তাঁর এই সিদ্ধান্তকে কুর্নিশ জানিয়েছে। শুধুমাত্র স্কুলকে ভালোবেসে তাঁর এই নিঃস্বার্থ ভাবে এগিয়ে আসায় খুশি অভিভাবকরাও।

  • Link to this news (এই সময়)