বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার অন্তত ৬ মাস আগেই ভোটের ফলাফল নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘রাম মন্দির নিয়ে রাজনীতি করে ভোট চেয়ে ২৪০-এ আটকে গেছে! কেন্দ্রের এই সরকার বেশি দিন টিকবে না কারণ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় নয় বরং বাধ্যবাধকতায় সরকার চলছে। ২০২১-এ বাংলায় বিজেপি ৭৭টি আসন পেয়েছিল, এবারে ৫০-এর নীচে আটকে যাবে।’ কেন এমন ভবিষ্যদ্বাণী, তার ব্যাখ্যায় অভিষেক বলেন, ‘আত্মবিশ্বাস আমার। কারণ মানুষের প্রতি, দলের কর্মীদের প্রতি আমার পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা আছে। বছরভর মানুষের পাশে তৃণমূলের কর্মীরাই থাকেন।’
উল্লেখ্য, পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী বুধবার সাতগাছিয়া থেকে সাংসদ হিসাবে সুদীর্ঘ এগারো বছরের কর্মযজ্ঞের খতিয়ান সম্বলিত ‘নিঃশব্দ বিপ্লব’ পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক। মঞ্চ থেকে তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘৬৯৫ পাতার এই বইয়ের প্রথম পরিচ্ছদে মাত্র ৫০-৬০টি পাতা ছিল। গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ, বিধায়ক তহবিলের কাজের হিসাব এতে নেই। কেবল সাংসদ তহবিলের পাঁচ কোটি টাকার হিসাব রয়েছে। যাঁরা ডায়মন্ড হারবার মডেলের ব্যঙ্গ করেন, তাঁদের এই পুস্তিকা পাঠানো হোক। বিরোধীদের বলব, তৃণমূলের কুৎসা না করে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে মুখোমুখি হওয়া যাক।’ সেই সঙ্গে তাঁর আরও ঘোষণা, ‘আরও বড় করে এবছর সেবাশ্রয় হবে। শ্রদ্ধার্ঘ্যও চালু থাকবে, দরকারে আরও কিছু আবেদন আসলে সরকারের কাছে উপস্থাপন করব।’
প্রসঙ্গত, নিজের সংসদীয় কেন্দ্রে বার্ধক্য ভাতা ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য’ সূচনার জন্য অভিষেককে দু’বার চিঠি দিয়েছিল আয়কর দপ্তর। সেই চিঠি দেখিয়ে এদিন ক্ষুব্ধ-কণ্ঠে অভিষেক বলেন, ‘শ্রদ্ধার্ঘ্য দেওয়া অপরাধ? এবছর দুর্গাপুজোর মধ্যে এই চিঠির কপি আমি পঁচাত্তর হাজার শ্রদ্ধার্ঘ্য প্রাপকের বাড়ি পৌঁছে দেব। আপনারাও দেখুন, বাংলা বিরোধী বিজেপির প্রকৃত স্বরূপ কী! বঙ্গ বিজেপির নেতারা দিল্লির যে সকল নেতাদের পাঞ্জাবি ধরে রাজনীতি করেন, তাঁদেরও ক্ষমতা নেই আমাকে আটকাবে। বাংলার সুসন্তান আমি, গলা কেটে দিলেও জয় বাংলা বেরোবে।’
পহেলগাম থেকে আরজি কর, একাধিক ইস্যুতে এদিন সুর চড়িয়েছেন সাংসদ। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে তাঁর প্রশ্নবাণ, ‘বাংলার সরকার অনুপ্রবেশ ঘটায়? এদিকে বিজেপি নেতা বাংলাদেশ সরকারকে সার্টিফিকেটে দিয়ে ভারতকে ছোট করছেন। হিন্দুদের রক্ষাকর্তা বিজেপি দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছে! ধন্যবাদ মুখ্যমন্ত্রীকে, নাহলে এঁদের আসলে চেহারা মানুষ দেখতে পেতেন না। বাংলাদেশের চিন্ময় প্রভুর খোঁজ নিচ্ছেন না কেন? বাংলাভাষীকে বাংলাদেশি, পাগড়ি পরিহিতদের খালিস্তানি বলা হচ্ছে! এই বিদ্বেষ-বৈষ্যমের রাজনীতি কোনোদিন বাংলায় ছিল না।’
‘রাম-বাম’কে নিশানা করে সাংসদ বলেন, ‘আরজি করের ঘটনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিবাদে তৎকালীন কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবি করা হলে পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ব্যর্থতায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইবি ডিরেক্টরের পদত্যাগ দাবি করবেন না কেন?’ এসএসসি-কাণ্ডে বিচারপতি যশবন্ত বর্মার প্রসঙ্গ টেনে তাঁর প্রশ্ন, ‘একজন বিচারপতি দুর্নীতিগ্রস্ত হলে পুরো বিচারব্যবস্থা দুর্নীতিগ্রস্ত হয় না! তাহলে এসএসসিতে কীভাবে পুরো প্যানেল বাতিল হল?’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তাঁর আক্রমণ, ‘লাশের রাজনীতি করতে রবীন্দ্রনগরে এসেছিলেন! মহিলাদের তাড়া খেয়েছেন। তিন ঘন্টার মধ্যে লোকসভা স্পিকার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে দিলেন। কেন্দ্রের বঞ্চনার জন্য কটা চিঠি লিখেছেন?’ তাঁর সংযোজন, ‘আমি কেন এত ভোট ব্যবধানে জিতেছি তা নিয়েও মামলা হয়েছে। বিজেপি এখন থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী ঠিক করুক। ব্যবধান আট লক্ষ করব। তর্কের খাতিরে বলছি, এক ভোট হলেও ব্যবধান বাড়বে।’
প্রতিবারের মতো এবারও সুদীর্ঘ এগারো বছরের যাত্রায় দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে পাশে পেয়ে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন অভিষেক। অনুষ্ঠানে বিপুল জনসমুদ্রের কারণে তিনি জানিয়েছেন, আগামী বছর মহেশতলার বাটানগর স্টেডিয়ামে সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠান আয়োজিত হবে। সুব্রত বক্সী ছাড়াও এদিন উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী দিলীপ মণ্ডল, বিধায়ক অশোক দেব, পান্নালাল হালদার, শঙ্কর নস্কর, শওকত মোল্লা, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর খান প্রমুখ।