ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ভোটার তালিকায় ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ নামে বিশেষ কিছু কাজ করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। তার জন্য যে যে নিয়ম করা হয়েছে তা নিয়েই তাঁর বিরোধিতা। বিহারে চলতি বছরের শেষেই নির্বাচন হওয়ার কথা, সেই কারণে বিহার থেকেই শুরু হতে চলেছে এই উদ্যোগ। তার পরে দেশের অন্য রাজ্যে এই কাজ হবে। তার আগেই তোপ দাগলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।
নির্বাচন কমিশনের যুক্তি, প্রথম সারির অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ভারতের ভোটার তালিকায় বেআইনি অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। বিদেশি নাগরিকদের ভোটার হিসেবে নাম নথিভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। সেই কারণে ভোটার তালিকা সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে নির্বাচন কমিশন এই কাজ করছে। ভোটারদের নাম বাদ দিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা করতে চাইছে বিজেপি, অভিযোগ মমতার।
নির্বাচন কমিশন নিয়ম করেছে, ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় যাঁদের নাম ছিল না, তাঁদের জন্মস্থানের প্রমাণের নথি দিতে হবে। ২০০৩ সালের পরে যাঁদের ভোটার তালিকায় নাম ঢুকেছে বা যাঁরা নতুন আবেদন করছেন, তাঁদের একটি ফর্ম ফিল আপ করে জমা দিতে হবে। সেখানেই এমন কিছু শর্ত রয়েছে, যা নিয়ে আপত্তি তুলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মগ্রহণকারী ভোটারদের জন্মতারিখ ও জন্মস্থানের উল্লেখ করে প্রামাণ্য নথি দিতে হবে। আর তার পরে জন্মগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত প্রমাণপত্র দিতে হবে, তার সঙ্গে বাবা-মায়ের নথিপত্রও দিতে হবে। এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি করেছেন মমতা। তিনি বলেছেন, ‘১৯৮৭-এর আগে যাঁরা জন্মেছে তাঁরা ভারতের নাগরিক নয়? ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা পেয়েছিল। তাহলে ১৯৮৭ সাল কোথা থেকে এল? বুঝতে পারছি না আমি...২০০৪ সালই বা কেন এল?’ বাবা-মায়ের জন্মের নথি কী ভাবে মিলবে সেটা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। মমতার তোপ, ‘বাবা-মায়ের বার্থ সার্টিফিকেট দিতে হবে, এটা কী নিয়ম...প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব তো আগে তো ছিল না। নিজেদেরই জন্ম শংসাপত্র নেই। বাবা-মায়ের কোথা থেকে দেবে?’
এনআরসি-র প্রসঙ্গও টেনে এনেছেন মমতা। তাঁর প্রশ্ন, ‘এটা কি এনআরসি প্রতিষ্ঠা করার কাজ চলছে? এটা এনআরসি-র থেকেও ভয়ঙ্কর...তরুণ, অল্পশিক্ষিত সাধারণ মানুষ, পরিযায়ী শ্রমিক সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’ তরুণদের ভোট দিতে বাধা দেওয়ার চক্রান্ত হচ্ছে বলেও অভিযোগ তাঁর। গ্রামবাংলার মানুষের নাম বাদ দিয়ে অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের নাম দিয়ে ভোটার তালিকা ভরানোর লক্ষ্যেই এমন পদক্ষেপ বলে অভিযোগ মমতার। অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রেও এমনই হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য নিয়মে পরিবর্তন আনার দাবিও তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।