বর ষোলো বছরের বড়, মিলছিল না সুখ! প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুন স্ত্রীর, কী সাজা শোনাল আদালত?
প্রতিদিন | ২৭ জুন ২০২৫
সুমন করাতি, হুগলি: ষোলো বছরের বড় স্বামীর সঙ্গে খুশি ছিলেন না। জড়িয়ে পড়ে অন্য সম্পর্কে। প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু স্বামীর সম্পত্তির লোভও সামলাতে পারেনি। তাই ‘পথের কাঁটা’ সরাতে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে খুনের পরিকল্পনা করে। সেই মতো বাড়িতে দুষ্কৃতী ঢুকিয়ে খুন করায় স্বামীকে। পোলবার খুনের ঘটনায় ১৩ বছর পর সেই মামলাতে মোট ৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিলেন চুঁচুড়া আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক কৌস্তভ মুখোপাধ্যায়। দোষীদের মধ্যে স্ত্রী ও তার প্রেমিক বাদে বাকি ৫ জন ভাড়াটে দুষ্কৃতী।
পোলবার পাটনা গ্রামের দম্পতি ছিলেন কৃষ্ণ ও রিনা মাল। ২০১২ সালে ঘটনার সময় গৃহকর্তার বয়স ছিল ৪৫। তাঁদের একমাত্র ছেলে সেই সময় নাবালক। বয়স ছিল ১৪। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে বয়সের প্রায় ১৬ বছরের ফারাক থাকায় স্বামীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে সুখি ছিল না রিনা। জিকো পাল নামে প্রায় সমবয়সি এক যুবকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় রিনা। প্রথমে ভেবেছিল প্রেমিকের সঙ্গে অন্যত্র পালিয়ে যাবে। কিন্তু স্বামীর সম্পত্তির লোভ সামলাতে পারেনি। প্রেমিকের সঙ্গে মিলে স্বামীকে খুনের ছক কষে রিনা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ‘১২ সালের ২৮ মার্চ গভীর রাতে জিকো-সহ ৫ ভাড়াটে গুন্ডা দীপঙ্কর কর্মকার, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, লক্ষ্মীকান্ত চক্রবর্তী, অভিজিৎ চক্রবর্তী এবং রাজ দাসকে ঘরে ঢোকান রিনা। দরজা খুলে দেয় সে। সকলে মিলে ঘুমন্ত কৃষ্ণের গলার নলি কেটে খুন করে। পরিকল্পনা মতো ডাকাতির গল্প সাজায় রিনা। তাঁকে একদল দুষ্কৃতী ধর্ষণ করেছে বলেও অভিযোগ জানায় পুলিশে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র লন্ডভন্ড অবস্থায় দেখতে পারে তদন্তকারীরা। তবে পুলিশি তদন্তে রিনার বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি খুঁজে পায় পুলিশ। ধর্ষণের অভিযোগও মেডিক্যাল পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়নি। পুলিশের সন্দেহ রিনার উপর পড়ে। তাকে স্বামীকে খুনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে জেরা করতেই পুরো ঘটনা সামনে আসে।
মামলার সরকারি আইনজীবী বিদ্যুৎ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, স্বামীকে খুনে ও খুনের পরিকল্পনার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে স্ত্রী। শুধু তাই নয়, বাকি খুনের সঙ্গে যুক্ত রিনার প্রেমিক ও পাঁচ দুষ্কৃতীর সাজা ঘোষণা হয়েছে। প্রত্যেকেরই যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদালতের রায়ে খুশি কৃষ্ণ মালের পরিবার।