রথযাত্রা উপলক্ষ্যে উত্সবের মেজাজ রায়গঞ্জের দেবীনগর এলাকার দেবীতলায়। দেবীতলার রথ নামে পরিচিত এই রথের বিশেষত্ব হলো জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বদলে রাধা ও গোবিন্দের বিগ্রহ। রাধা ও গোবিন্দকে রথের ভিতরে বসিয়ে ঘোরানো হয় দেবীতলা গ্রাম।
কথিত আছে, একশো বছরের বেশি পুরনো এই রথযাত্রায় রাধা ও গোবিন্দের যে বিগ্রহ বসানো হয়, তা একসময় অবিভক্ত বাংলার সিরাজগঞ্জে পুজো করা হতো। সেখানে জগন্নাথ মিশ্রের মন্দিরে পাঁচ জোড়া রাধা ও গোবিন্দের মূর্তি ছিল। তিনি এদেশে ওই পাঁচ জোড়া মূর্তি নিয়ে চলে আসেন এবং পুজো করার জন্য সেগুলো তুলে দেন সূর্যকান্ত চক্রবর্তীর কাছে। পাঁচ জোড়া রাধা ও গোবিন্দের মূর্তির মধ্যে এক জোড়া মূর্তি বারোয়ারি হিসেবে পূজিত হতো। সেই মূর্তি বসিয়ে রথযাত্রা শুরু হয় দেবীতলায়। সূর্যকান্তবাবুর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে সুধীর চক্রবর্তী এই পুজোর দায়িত্ব নেন। বংশানুক্রমে সেই মূর্তির পূজার্চনা করা হয় এবং রথযাত্রা দেবীতলায় নিয়ে যায় নিতাই গৌর সঙ্ঘ মন্দির কমিটি। সুধীর চক্রবর্তীর স্ত্রী মায়া চক্রবর্তী বলেন, আমাদের দেবীনগরে যখন বাড়ি ছিল, সেই সময় থেকেই এই রাধা গোবিন্দের বিগ্রহ দিয়ে রথ হতো। তবে এখন আমরা বীরনগরে চলে এসেছি। মূর্তি সারা বছর আমাদের বাড়িতেই থাকে। তবে রথের দিন দেবীতলার মন্দির কমিটি নিয়ে গিয়ে সেখানে মন্দিরে রেখে পুজো করেন, আবার সাতদিন পর তাঁরা বিগ্রহ দিয়ে যান।
এই রথ নিয়ে দেবীতলা মেলা কমিটির সভাপতি গৌর গোপাল সাহা বলেন, আমাদের এই রথ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎসাহ ব্যাপক থাকে। রথের দিন দুপুরে পুজো হয় রাধা ও গোবিন্দের। তারপরই রথে বসানো হয় বিগ্রহ। সাতদিন ধরে চলে পুজো, দেওয়া হয় ভোগ। কালিয়াগঞ্জের ডালিমগাঁও এলাকার পুরোহিত লক্ষ্ণণ সাহা এই পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন।
এলাকার মহিলারা সমানভাবে এই পুজোয় অংশ নন। মহিলারা থাকেন পুজোর যাবতীয় আয়োজনে। আরতী চৌধুরী বলেন, আমরা এই সাতদিন খুবই মজা করি। জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা এই রথে না থাকলেও আমাদের এই মন্দির একপ্রকার রাধা ও গোবিন্দের মাসির বাড়ি বলে মনে করি। দেবীনগরের রাধা গোবিন্দের মন্দির। - নিজস্ব চিত্র।