মাথাভাঙা মদনমোহন বাড়ির মন্দির তৈরির সাত বছর পর শুরু হয়েছিল রথযাত্রা। করদমিত্র রাজ্য কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সময়কালে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে মাথাভাঙা শহরের পূর্বপ্রান্তে তৈরি হয় মদনমোহন মন্দির। মাথাভাঙার ইতিহাসবিদদের দাবি, এর সাত বছর পর ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়েছিল রথযাত্রা। শুরুতে প্রান্তিক এই শহরে বাঁশের তৈরি রথেই মামাবাড়ি যেত কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা। মদনমোহন মন্দির থেকে রথ বেরিয়ে সোজা ইমিগ্রেশন রোড দিয়ে শনিমন্দির পর্যন্ত যেত রথ। সেখানে সাতদিন থাকার পর উল্টো রথে মন্দিরে ফিরে যেত কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা।
নদীঘেরা শহর মাথাভাঙার শতাব্দী প্রাচীন মদনমোহন মন্দিরকে ঘিরে রয়েছে ইতিহাসের নানা ছবি। প্রজাবৎসল রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের সময়কালে শহরে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য ও প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছিল। মদনমোহন মন্দিরে রথযাত্রা চালুর পর পার্শ্ববর্তী জায়গায় টিনের চালের নাটমন্দির তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সেখানেই গড়ে ওঠে আশুতোষ হলঘর। বর্তমানে কাঠের তৈরি সুদৃশ্য রথ মদনমোহন মন্দির থেকে বেরিয়ে চৌপথি পর্যন্ত আসে। শহরজুড়ে বিদ্যুতের হাই ভোল্টেজের তারের কারণে রথ এখন আর শনিমন্দির পর্যন্ত যায় না। চৌপথি থেকে ঘুরে মানসাই নদীর পাড় পর্যন্ত যায়। শহরের বাসিন্দারা জানান, সময়ের সঙ্গে রথের মেলার জৌলুস এখন আর আগের মতো নেই। কয়েক দশক আগেও গ্রাম থেকে প্রচুর মানুষ রথের মেলায় আসতেন। এখন রথের মেলার ভিড়ে গ্রামের মানুষ চোখে পড়ে না। বসে না হরেকরকম সামগ্রীর দোকান। মাথাভাঙার লেখক জয়ন্ত গুহ ঠাকুরতা বলেন, মদনমোহন মন্দির প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর রথের মেলা শুরু হয়েছিল। প্রথমদিকে বাঁশের তৈরি রথেই কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা মামাবাড়ি যেত। সেই সময়ে রথ শনিমন্দির এলাকা পর্যন্ত যেত। এনিয়ে আর কোনও প্রমাণ্য নথি নেই। ইতিহাসের গবেষক রাজর্ষি বিশ্বাস বলেন, মদনমোহন মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে অনেক কিছু পাওয়া যায়। রথযাত্রা নিয়ে তেমন কিছু পাওয়া যায়নি। লোকমুখে পাওয়া তথ্যই ভরসা। তবে রথের মেলার জৌলুস আগের মতো আর নেই।