• স্বপ্নাদেশ পেয়ে গড়ে ওঠে শিলিগুড়ির গৌড়ীয় মঠ
    বর্তমান | ২৭ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি: শিলিগুড়িতে পূজিত হচ্ছে ওড়িশার জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা মূর্তি। ৫০ বছরের বেশি আগে এই তিনমূর্তিকে ঘিরে শিলিগুড়িতে গড়ে ওঠে কেশব ঘোষ গোস্বামী গৌড়ীয় মঠ। স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন নবদ্বীপের এক মহারাজ। মন্দির প্রতিষ্ঠার কয়েকবছর পর শিলিগুড়ির শক্তিগড়ে এই গৌড়ীয় মঠে শুরু হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা। দেখতে দেখতে এবার তারই ৫৬ বছর। শিলিগুড়ি ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রার মধ্যে অন্যতম শক্তিগড়ের এই কেশব ঘোষ গোস্বামী গৌড়ীয় মঠের রথ। 

    এই মঠ গড়ে ওঠার ইতিহাস বেশ চাঞ্চল্যকর। আজ থেকে বহু বছর আগে এই মঠের কাছে এক স্থানীয় ব্রাহ্মণ ওড়িশা থেকে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি এনে নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি জগন্নাথদেবের পূজো-সেবা সব করতেন। কিন্তু, বয়স বেড়ে যাওয়ার পর সেভাবে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রার পুজো, সেবা দিতে পারছিলেন না। সেসময় নবদ্বীপ থেকে এক মহারাজ এসেছিলেন। তিনি ভক্তদের কাছে খবর পান, শক্তিগড়ে এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে ওড়িশার জগন্নাথ দেবের মূর্তি রয়েছে। তিনি দেখতে যান। ঠিকমতো পুজো ও সেবা হচ্ছে না দেখে তিনি ব্রাহ্মণকে বুঝিয়ে বলেন, আপনার বয়স হয়েছে। ঠিকমতো জগন্নাথ দেবের পুজো ও সেবা দিতে পারছেন না। আপনি আমাদের হাতে জগন্নাথদেবের মূর্তি দিন। আমরা নিয়মিত পুজো ও সেবা করব। ওই ব্রাহ্মণ ও নবদ্বীপের মহারাজ কয়েকদিন বাদে সেই স্বপ্নাদেশও পান। তারপর নবদ্বীপের মহারাজের হাতে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি অর্পণ করেন ব্রাহ্মণ। তারপর ভক্তদের সহযোগিতায় বর্তমানের মঠের জায়গাতেই বেড়ার ঘর দিয়ে তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করে জগন্নাথ দেব, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তির আসন পাতেন। তারপর এখানে এই গৌড়ীয় মঠ গড়ে ওঠে। শুরু হয় রথযাত্রা। ভক্তদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ভক্তদের সহযোগিতায় ধীরে ধীরে মঠ পাকা হয়।

    ৫৬ বছরে এবারও ধুমধাম করে রথযাত্রা হবে বলে জানান মঠের বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত মদন মহারাজ। তিনি বলেন, জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় আমাদের প্রস্তুতি। এবারও সেইমতো প্রস্তুতি সেরেই স্নানযাত্রা হয়েছে। রথের আগের দিন গোটা মন্দির এবং মাসির বাড়ি ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে সাজিয়ে তোলা হবে। রথের দিন সকাল থেকেই পুজোপাঠ শুরু হয়ে যায়। দুপুর একটায় জগন্নাথ দেবকে ভোগ নিবেদন করা হবে। তারপর দুপুর দুটোয় ভক্তদের দর্শনের জন্য জগন্নাথ দেব রথে বসবেন। বিকেল চারটে রথযাত্রা শুরু হবে। সাতদিন মাসির বাড়িতে থাকার পর আবার ভক্তদের দর্শন দিয়ে নিজের বাড়িতে ফিরবেন জগন্নাথ দেব। নবদ্বীপ, বৃন্দাবন থেকেও বহু বৈষ্ণব মতাদর্শ অনুরাগী ও মহারাজরা এসে ভিড় করেন। এই রথকে কেন্দ্র করে বর্ধমান রোডের দু’পাশে সারি সারি দোকান বসে মেলায়। 

    এছাড়াও শিলিগুড়িতে বিভিন্ন পাড়ায় ক্লাব বা সংগঠন আয়োজিত রথযাত্রা হয়। রথখোলার রথযাত্রা উৎসবও শিলিগুড়ির বহু পুরনো। এছাড়া বিধান মার্কেট, ঘোঘোমালিতেও রথের মেলা বসে। তবে শিলিগুড়িতে ইস্কন মন্দির তৈরির আগে গৌড়ীয় মঠের রথের প্রতি শহরবাসীর উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল বেশি।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)