কোচবিহারের প্রায় সব কিছুই হয় মহারাজাদের নামে। রাজা নেই। কিন্তু রাজ ঐতিহ্য এখনও স্বমহিমায়। একশো বছরেরও আগে মহারাজারা যে রথ নির্মাণ করেছিলেন মদনমোহনের রথযাত্রার জন্য, সেটিই এতদিন সংস্কার করে চালানো হচ্ছিল। এবার মদনমোহনের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি রথ বানানো হল। আজ, শুক্রবার বিকেলে মদনমোহন বাড়ি থেকে রথে চেপে মাসির বাড়ি যাবেন কোচবিহারের প্রাণের ঠাকুর মদনমোহন।
প্রতিবছর মদনমোহনের রথযাত্রাকে ঘিরে কোচবিহারে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। খোদ জেলাশাসক দড়ি টেনে রথযাত্রার সূচনা করেন। হেঁটেই তিনি রথযাত্রায় অংশ নেন। আর এবার নতুন রথকে কেন্দ্র করে মদনমোহনের রথযাত্রা একেবারে আলাদা মাত্রা বহন করতে চলেছে। তাই গত কয়েকমাস ধরেই চলছিল তার প্রস্তুতি।
কোচবিহারের মহকুমা শাসক কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, মদনমোহনের জন্য এ বছর সম্পূর্ণ নতুন একটি রথ নির্মাণ করা হয়েছে। এবার রথের বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে ১৭ হাজার টাকা। প্রতিবছর রথ সংস্কার করা হতো। এবার অনেক আগেই প্রস্তুতি নিয়ে পুরনো রথের মতো হুবহু নতুন রথ বানিয়েছি। সেই রথে চেপেই মাসির বাড়ি যাবেন মদনমোহন।
মদনমোহন মন্দিরের রাজআমলের পুরনো রথটি ছিল ২২ ফুট উঁচু এবং দৈর্ঘ-প্রস্থে ১২ ফুট করে। বিরাট ওই রথের আদলে হুবহু আর একটি নতুন রথ নির্মাণ করার জন্য বনদপ্তরের মাধ্যমে জলদাপাড়া অভয়ারণ্যের বিভিন্ন রেঞ্জ থেকে বেছে বেছে শাল ও সেগুন কাঠের লগ নিয়ে আসা হয়েছিল। সেই লগ চেরাই করে গুঞ্জবাড়ির যেখানে সারা বছর পুরনো রথ রাখা থাকে সেখানেই নতুন রথটি নির্মাণ করা হয়েছে। রথের চাকা বানিয়ে আনা হয়েছে তুফানগঞ্জ থেকে। গত মঙ্গলবার সেই রথের ট্রায়াল রান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে ফুলে দিয়ে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। আজ, বিকেল ৪টে ৫৫ মিনিটে মদনমোহনকে চাপিয়ে নির্দিষ্ট রুট ধরে রথযাত্রা শুরু হবে। রথ উপলক্ষ্যে গুঞ্জবাড়িতে হবে মেলা। সাতদিন গুঞ্জবাড়িতে থেকে মদনমোহন আবার চিরাচরিত পথ ধরে ফিরে আসবেন মন্দিরে। যুগ যুগ ধরে কোচবিহারবাসীর মধ্যে রথযাত্রাকে ঘিরে আলাদা ভাবাবেগ জড়িয়ে রয়েছে। আর এবার যেহেতু মদনমোহনের নতুন রথে চেপে যাত্রা, তাই তা আলাদা মাত্রা পেয়েছে।