নির্মাল্য সেনগুপ্ত, রায়গঞ্জ: শতবর্ষ প্রাচীন রথের রশি না টানলেই নয়। এমনই বিশ্বাসে রায়গঞ্জ শহরের বন্দর সাহাপল্লীর দাসবাড়ির রথ আজও এলাকাবাসীর কাছে জনপ্রিয়। একটি পরিবারের নিজস্ব হলেও, এই রথযাত্রা দিনদিন হয়ে উঠেছে সর্বজনীন। পরিবারের সদস্যরা জানান, একসময় স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন গৃহকর্তা অনন্ত দাস গোঁসাই। তিনিই পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিয়মমতো শুরু করেছিলেন রথযাত্রা। নিমকাঠ দিয়ে তৈরি করিয়েছিলেন তিনটি রথ। নিমকাঠেই তৈরি হয়েছিল জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্রহ। সেই থেকে শুরু পথচলা। তিন পুরুষ ধরে রীতিনীতি মেনে চলে আসছে এই রথযাত্রা। এলাকাবাসী ছাড়াও শহরের অন্য এলাকার ভক্তগণও প্রতিবছর এই রথযাত্রায় সামিল হন। তবে নানা কারণে এখন আর তাঁরা তিনটি রথ বের করতে পারেন না। একটি রথেই জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রাকে নিয়ে যাত্রা করেন।
প্রতিবারের মতো এবারও দাসবাড়ির রথ বন্দর সাহাপল্লি থেকে বেরিয়ে ঘড়িমোড়, থানামোড় হয়ে শহর পরিক্রমা করে ওই এলাকায় দুর্গামন্দিরে মাসির বাড়ি যাবে। আবার উল্টোরথে সেখান থেকে বেরিয়ে শহর পরিক্রমা করে রথ ফিরে আসবে বাড়িতে। দাস পরিবারের তরফে বলরাম দাস বলেন, এই রথ ঠিক কোন বছর শুরু হয়, সে ব্যাপারে বলা যায় না। তবে আমার ঠাকুরদা অনন্ত দাস গোঁসাই স্বপ্নাদেশ পেয়ে রায়গঞ্জ প্রথম বড় আকারে রথযাত্রার আয়োজন করেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের নিয়ম মেনে যাবতীয় আয়োজন হয়। ওখানকার পান্ডারা এখানে এসে যে নিয়ম রীতি মেনে পুজো করার নির্দেশ দিয়ে যান, সেই মতোই যাবতীয় উপাচার এবং আয়োজন হয়।
জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা আগেই হয়েছে। বুধবার হয়েছে শুভ অধিবাস। সেদিন বাড়ির জগন্নাথ মন্দিরের সদর দরজা খুলে পূজার্চনা শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দিনভর চলে নামসংকীর্তন। রথের দিন পুজোর পর ভোগ নিবেদন করে যাত্রা শুরু হবে। ৫৩ রকম ব্যঞ্জন অর্পণ হয় ভোগে। খিচুড়ি, নানারকম সব্জি ভাজা, ডাল, পনির, কলার বড়া, মালপোয়া, খাজা, তিলের নাড়ু, রকমারি মিষ্টি নিবেদন করা হবে। পরিবারের সদস্যরাই সকলে মিলে সেই আয়োজন করেন। বিতরণ হয় ভোগও।