• দীর্ঘ ১৮১ বছর ধরে মকদুমপুরের রাস্তা পরিক্রমা করে ব্রজমোহন রাধারানির রথ
    বর্তমান | ২৭ জুন ২০২৫
  • সৌম্য দে সরকার, মালদহ: ইংলিশবাজার শহরের মকদুমপুরের ব্রজমোহন রাধারানির রথযাত্রা জেলার অন্যতম পুরনো ধর্মীয় উৎসব। ১৮১ বছর আগে এই রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন তৎকালীন প্রথিতযশা চিকিৎসক ঠাকুরদাসবাবু দাস। তিনি স্বপ্নাদিষ্ট হয়েছিলেন স্বয়ং ব্রজমোহনের মাধ্যমে। মকদুমপুরের বিখ্যাত রথ তৈরি হয়েছিল তাঁরই পৃষ্ঠপোষকতায়। তখন মহানন্দা থেকে উদ্ধার করে ব্রজমোহন রাধারানির পুজো করতেন স্থানীয় এক বৃদ্ধা। তিনি স্বপ্নে আদেশ পেয়ে ডাঃ ঠাকুরদাসবাবু দাসকে অনুমতি দেন ব্রজমোহনকে রথে তোলার। এভাবেই শুরু হয় মকদুমপুরের ব্রজমোহন রাধারানির রথযাত্রার। তাঁর নামেই মকদুমপুরে রয়েছে ঠাকুরদাসবাবু লেন।

    ডাঃ ঠাকুরদাসবাবু দাসের চার ছেলে রাধাচরণ, বৈষ্ণবচরণ, গৌড়চরণ এবং বিপ্রচরণ ছিলেন কৃতী চিকিৎসক। ঠাকুরদাসবাবুর চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্ম এখনও বংশের এই রথযাত্রার ঐতিহ্যকে শ্রদ্ধার সঙ্গে বহন করে চলেছেন। বর্তমানে ব্রজমোহন রাধারানি অধিষ্ঠান করেন মকদুমপুরের ব্রজমোহনতলা লেনের নিজস্ব মন্দিরে। এখানে নিত্যপুজো হয় তাঁদের। রথযাত্রার আগের দিন দাস পরিবারের অতিথি হয়ে আসেন ব্রজমোহন রাধারানি। রাতে ফল ইত্যাদি গ্রহণ করেন। রথযাত্রার দিন অন্নগ্রহণ করেন না ব্রজমোহন। সেদিন তাঁর ভোগ দেওয়া হয় লুচি, তরকারি, ছানা, মিষ্টি, দুধ ইত্যাদি দিয়ে। তবে তাতে অবশ্যই থাকতে হয় মাখন। রথযাত্রা শেষে মকদুমপুরের বারোয়ারিতলা লেনের মন্দিরে অতিথি হয়ে থাকেন ব্রজমোহন রাধারানি। দাস পরিবারের সদস্যরা ছড়িয়ে রয়েছেন দেশে ও বিদেশে। তাঁরা যেখানেই থাকুন, নিজেদের সাধ্যমতো ব্রজমোহন রাধারানির সেবা করেন উল্টোরথের পরের দিন পর্যন্ত। সেদিন দিন সন্ধ্যায় নিজেদের অধিষ্ঠানে ফেরেন ব্রজমোহন রাধারানি। 

    মকদুমপুরের দাস বংশের সদস্য বৈদ্যনাথ দাস বলেন, আমাদের বংশের সকলের অংশগ্রহণে এই কয়েকদিন ধরে ব্রজমোহন রাধারানির নিত্যসেবা চলে। আমাদের পূর্বপুরুষ পুরুষোত্তম দাস সহ গুরুজনেরা নতুন প্রজন্মকে শিখিয়ে গিয়েছেন কীভাবে ব্রজমোহন রাধারানির সেবা করতে হয়।

    রথযাত্রার উদ্যোক্তা ও ভক্তবৃন্দ জানিয়েছেন,বারোয়ারিতলা লেনে অধিষ্ঠান করার সময়ে রথযাত্রার পরের দিন থেকে ব্রজমোহন রাধারানির অন্নভোগ হয়। সঙ্গে থাকে শাক, পাঁচ রকম ভাজা, ডাল বিভিন্ন তরকারি, চাটনি, পায়েস ও মিষ্টি। সব মিলিয়ে আটদিন ধরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষ এই প্রসাদ গ্রহণ করেন। উল্টোরথের দিন অবশ্য অন্নভোগ হয় না। লুচি, মাখন ইত্যাদি ভোগ নিবেদন করা হয়। ব্রজমোহন রাধারানির ভোগ ও প্রসাদ বিতরণের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধেই নিয়েছেন মকদুমপুরের দাস পরিবারের সদস্যরা। ভক্ত সাধারণের সেবার যাবতীয় ব্যয় বহন করেন দাস পরিবারের বর্তমান সদস্যরা।  নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)