• সেজে উঠেছে রানিসায়রের মোড়, বাজেট বাড়লেও তুঙ্গে যাত্রার বুকিং
    বর্তমান | ২৭ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: বলা হয় শ্রীচৈতন্যই যাত্রাপালার পথিকৃৎ। শত শত বছর পার করে ধীরে ধীরে আধুনিক হয়েছে সেই যাত্রা। বর্তমানে চতুর্দিকে মোবাইল ইন্টারনেটের রমরমা। সিনেমা, সিরিয়ালের যুগ পেরিয়ে মানুষ এখন মগ্ন রিলস আর ইউটিউবে। তা সত্ত্বেও যাত্রার আকর্ষণ আজও অটুট। মাঝে অবশ্য খারাপ সময় গিয়েছে। তারপর এল করোনা। লকডাউনে ধনেপ্রাণে মরতে বসেছিলেন যাত্রাশিল্পীরা। তবে আশার কথা ফের সুদিন ফিরছে যাত্রা শিল্পের। এখন বিয়েবাড়ির অনুষ্ঠানেও মানুষ যাত্রার আয়োজন করছে। প্রতি বছর বাজেট বাড়ছে যাত্রাপালার। তবু বুকিংয়ে কমতি নেই। 

    রথের সঙ্গে যাত্রার এক ঘনিষ্ঠ যোগ রয়েছে। রথযাত্রার দিন থেকেই যাত্রার বুকিং শুরু করার রেওয়াজ রয়েছে কয়েক শতাব্দী ধরে। তাই যাত্রাদলের বুকিং অফিসগুলি সেজে ওঠে রথের দিনে। দক্ষিণবঙ্গের ‘চিৎপুর’ বলা হয় রানিগঞ্জের রানিসায়রের মোড়কে। কয়েক দশক ধরে এখান থেকেই যাত্রাপালার বুকিং হয় দুই বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়ায়। এ বছরও রথের দিনে সেজে উঠেছে সেই দক্ষিণবঙ্গের চিৎপুর। নায়েকদের দাবি, এখন রথের আগে থেকেই বুকিং শুরু হয়ে যাচ্ছে। তবু রথের দিনের গুরুত্ব  অপরিসীম। এবারও বহু মানুষ জানিয়েছেন আজ, রথের দিনে তাঁরা যাত্রার বুকিং করতে আসবেন।  যাত্রার সুদিন যে ফিরতে চলেছে তা একটি ঘটনা থেকে স্পষ্ট হবে। বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী থানার রামপুর গ্রামের জয়রাম পাল হাজির হয়েছিলেন রানিসায়রের এক বুকিং অফিসে। তিনি  বলেন, মেয়ের বিয়েতে যাত্রা করাব। কোন যাত্রাপালা ভালো হবে? শুনে বুকিং অফিসে হাজির সকলেই অবাক। বিয়ের অনুষ্ঠানে যাত্রাপালা! কিন্তু জয়রামবাবু নিছক কথার কথা বলেননি। তিনি যাত্রাপালা বুকিং করিয়ে গত অগ্রাহয়ণ মাসে মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে গ্রামের মানুষকে পালা শুনিয়েছেন। এখন বিয়ের অনুষ্ঠান মানেই এলাহি আয়োজন। ডিজে, অর্কেস্ট্রা, গান শোনানো হচ্ছে আমন্ত্রিতদের। কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠানে যাত্রা দেখানোটা যথেষ্ট অভিনব। সেই রেওয়াজও যে শুরু হয়েছে তা এখানকার চিৎপুরে খোঁজ নিতেই জানা গেল। শুধু বিয়ের অনুষ্ঠানই নয়, অনেক নতুন নতুন ক্লাব যাত্রাপালার বুকিং করতে আসছে। যাঁরা আগে কখনও যাত্রা অনুষ্ঠান করায়নি।

    জানা গিয়েছে, ক্রেজ যত বাড়ছে যাত্রা দলগুলি বাজেটও তত বাড়াচ্ছে। জানা গিয়েছে, গত বছর যে দলগুলি ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় শো করেছে, এবছর তাঁদের দলের যাত্রা করা঩তেই খরচ পড়ছে ৯০ হাজার টাকা। কয়েকটি যাত্রাপালার একটি শোয়ের বুকিং হচ্ছে এক লক্ষ টাকার বেশি দিয়ে। ব্য‌বসায়ী ভক্তি মাহাত বলেন, যাত্রা শিল্পের স্বর্ণযুগ ফিরে আসছে। আমরা সবাই খুব খুশি।
  • Link to this news (বর্তমান)