হুগলির শ্রীরামপুর, গুপ্তিপাড়া বা মহিষাদলের রথযাত্রা ঘিরে নানা কাহিনি প্রচলিত। কিন্তু ঐতিহ্য, পরম্পরার দিক থেকে কোনও অংশে পিছিয়ে নেয় পাঁচশো বছরের পুরনো বর্ধমানের জামালপুরের কুলীন গ্রামের রথযাত্রা। এই গ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পুরীর রথের ইতিহাস। কথিত রয়েছে, এক সময় এই গ্রাম থেকেই পাটের তৈরি দড়ি যেত পুরীতে। তা দিয়েই রথের রশিতে টান দেওয়া হতো।
হুগলির মাহেশের রথ দেখতে গিয়ে রাধারানির হারিয়ে যাওয়ার গল্প এখনও মুখেমুখে ফেরে। মেলায় জিলিপি আর পাঁপড় ভাজা খাওয়ার কাহিনিও তো কম জনপ্রিয় নয়। রথের দিন কচিকাঁচারা রথ নিয়ে গ্রামের অলি-গলিতে ঘোরে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই কচিকাঁচাদের দেখে প্রবীণরা ছোটবেলার স্মৃতিতে উঁকি মারেন। প্রতিযোগিতা বেড়েছে। বইয়ের ব্যাগের ভারও বেড়েছে। কিন্তু সেই পুরনো রেওয়াজ এখনও গ্রামের কচিকাঁচারা ধরে রেখেছে। আষাঢ় মাসের এদিন শুধু রথের দড়ি টানার দিন তো নয়, শুরু হয় বাঙালির প্রাণের উৎসবের কাউন্টডাউনও। এদিনই খুঁটিপুজোর ধুম পড়ে যায়। পুজো কমিটিগুলির তৈরি করা ব্যানার শহরের অলি-গলিতে দেখা যায়।বর্ধমানের জামালপুরের কুলীন গ্রামের রথের উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। পাঁচ চূড়ার এই রথে অধিষ্ঠিত জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রা। স্থানীয় প্রবীণ মানুষজন বলেন, এই গ্রামে চৈতন্যদেবের পদধূলি পড়েছিল। সেই সময় থেকেই রথযাত্রা শুরু হয় জামালপুরের কুলীনগ্রামে।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি এ বলেন, এই গ্রাম ঘিরে নানা পরিকল্পনা রয়েছে। সেগুলি বাস্তবায়িত হবে।
বর্ধমানের রাজবাড়ির রথ ঘিরেও নানা কাহিনি প্রচলিত। এখানে দু’টি রথ বের হয়। রথে থাকেন লক্ষ্মী, নারায়ণ এবং রাধা, গোপাল। দু’টির মধ্যে একটি রাজার অন্যটি রানির রথ নামে পরিচিত। বর্ধমানের রাজবাড়ির কুলদেবতা লক্ষ্মী নারায়ণ জিউ মন্দির চত্বরে এই রথ টানা হয়। স্থানীয়রা বলেন, মহারাজা তেজচাঁদের আমল থেকে রাজবাড়ির রথযাত্রা চলে আসছে। এই রথযাত্রা ঘিরে বর্ধমানের বাসিন্দাদের মধ্যে অন্য আবেগ রয়েছে। রথের রশিতে টান দেওয়া দেখতে শহরের বিভিন্ন প্রান্তের বাসিন্দারা রাজবাড়িতে হাজির হন। রাজপরিবারের রথ ঘিরে এক সময় এই কাঞ্চননগরে মেলা বসত। এখনও এখানে পিতলের রথ দেখতে ভক্তের ঢল নামে। আউশগ্রামের দিগনগরের রথযাত্রাও বহু প্রাচীন। এই গ্রামের রথযাত্রা দেখতে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা ভিড় করেন।সকাল থেকেই জেলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের রেশ। দুপুরে খুঁটিপুজো। আর বিকালে রথের দড়িতে টান দিয়ে শুরু হয় বোধনের কাউন্টডাউন।