• সম্রাট জাহাঙ্গীর গোপীবল্লভপুরের রথযাত্রা উৎসবে সাহায্য পাঠাতেন
    বর্তমান | ২৭ জুন ২০২৫
  • প্রদীপ্ত দত্ত, ঝাড়গ্ৰাম: শ্রীপাট গোপীবল্লভপুর গুপ্ত বৃন্দাবন নামেও খ্যাত। বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের আদি তীর্থভূমি। পরম বৈষ্ণব শ্যামানন্দ সপ্তদশ শতকের প্রথম অর্ধে রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন। ৪০০ বছর ধরে চলে আসা এই রথযাত্রা উৎসব আজও ধুমধাম করে হয়ে চলেছে। জনশ্রুতি, সম্রাট জাহাঙ্গীর গোপীবল্লভপুরের রথযাত্রায় উৎসবের জন্য অর্থসাহায্য পাঠাতেন। 

    সুবর্ণরেখা নদীর ধারে ছিল কাশীপুর গ্ৰাম। বৈষ্ণব শ্যামানন্দ গ্ৰামের নামকরণ করেন গোপীবল্লভপুর। শ্রীকৃষ্ণের মন্দির তৈরি করেন। যার নাম গোবিন্দ জিউয়ের মন্দির। জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার বিগ্ৰহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বার্ষিক রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়। গোপীবল্লভপুর সপ্তদশ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকেই বৈষ্ণবদের তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। গোপীবল্লভপুরের রথযাত্রা ঘিরে হরেক কিংবদন্তি ছড়িয়ে আছে।

    লোকশ্রুতি, সপার্ষদ শ্যামানন্দ একবার পুরীর রথযাত্রা দেখতে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সেই বছর পুরীর রথযাত্রা দেখা সম্ভব হয়নি। জগন্নাথদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে পরের বছর রথযাত্রার সূচনা হয়। জনশ্রুতি আছে, শ্যামানন্দের জীবতত্ত্বের ব্যখ্যা শুনে  সম্রাট জাহাঙ্গীর খুশি হয়ে বৈষ্ণবক্ষেত্র গোপীবল্লভপুরের বার্ষিক রথযাত্রা উৎসবের জন্য সাহায্য পাঠাতেন। তবে সম্রাট ওরঙ্গজেব পুরীর জগন্নাথ মন্দির ১৬৯২ সালে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রথযাত্রা উৎসব সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ১৭০৭ সালে পুনরায় মন্দির উন্মুক্ত হলে রথযাত্রা উৎসব শুরু হয়। নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে শতাব্দী প্রাচীন এই রথযাত্রা আজও ধুমধাম করে হয়ে চলেছে।

    প্রতিবারের মতো রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির থেকে এবারও জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথ মাসির বাড়ি কাপাসিয়া যাবে। ন’দিন পরে উল্টোরথে পুনরায় ফিরে আসবে। গবেষক মধুপ দে বলেন, সপ্তদশ শতকের গোড়ায় শ্যামানন্দের হাত ধরেই গোপীবল্লভপুরে রথযাত্রার সূচনা হয়। বৈষ্ণব সংস্কৃতির পীঠ হয়ে উঠেছিল এই স্থান। জগন্নাথদেব ও রথযাত্রার সঙ্গে বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক আদিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসও জুড়ে আছে। গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্ৰাম, দাঁতনে লোধা, শবর জাতিরমানুষ প্রাচীন কাল থেকেই কাষ্ঠখণ্ড দারুব্রহ্মের পুজো করতেন। পঞ্চম শতাব্দীর পূর্ব থেকেই বৌদ্ধরা বুদ্ধের নানা প্রতীক নিয়ে রাস্তায় রথযাত্রা বের করতেন। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনেই আজকের এই রথযাত্রা বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে।

    গোপীবল্লভপুরের বাসিন্দা অনিমেষ সিংহ বলেন, ওড়িশার সঙ্গে এই এলাকার সাংস্কৃতিক নানা মেলবন্ধন রয়েছে। রথ যাত্রা এই এলাকার প্রধান উৎসব। মাঝে অবশ্য এই উৎসবে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। তবে বর্তমানে নতুন করে উৎসবের জৌলুস বেড়েছে। 

    রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দির কমিটির সম্পাদক কল্যাণ বারিক বলেন, কয়েক শতাব্দী ধরে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের আদি তীর্থভূমি হিসেবে গোপীবল্লভপুর পরিচিত। প্রতিবারের মতো এবছরও বহু ভক্তের সমাগম হবে।(গোপীবল্লভপুর রাধা গোবিন্দ জিউ মন্দিরের রথযাত্রা।-নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)