সংবাদদাতা, লালবাগ: প্রায় ২৫০বছরের পুরনো মুর্শিদাবাদ থানার নশিপুর জাফরাগঞ্জ আখড়ার রথযাত্রা। নশিপুরের রথ উৎসবের প্রধান আকর্ষণ রুপোর রথ। সোজা ও উল্টো রথের দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি আশপাশের জেলা থেকেও ভক্তরা ভিড় জমান। মহন্ত রাঘবদাস আচারী বলেন, একমাত্র জাফরাগঞ্জ আখড়াতেই রুপোর রথ রয়েছে। রাজ্যের আর কোথাও রুপোর রথ নেই।
আনুমানিক ১৭৬০খ্রীস্টাব্দে মহন্ত লছমনদাস আচারী জাফরাগঞ্জ আখড়ার প্রতিষ্ঠা করেন। তবে আখড়ায় রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন পরবর্তী মহন্ত চতুর্ভুজদাস আচারী। তিনি দু’টি কাঠের রথ তৈরি করে রথযাত্রা শুরু করেছিলেন। সেসময় আখড়া থেকে প্রায় এক কিমি দূরে ধনকুবের জগৎ শেঠের বাড়িতে গিয়ে রথযাত্রা শেষ হতো। ওই বাড়িতে সাতদিন কাটিয়ে উল্টো রথের দিন বিকেলে আখড়ায় রথ ফিরত। ১৭৮৮সালে মহন্ত গোপালদাস আচারীর সময় আখড়ার রথ উৎসব আরও বড় আকারে হতে শুরু করে। তিনি দু’টি পিতলের রথ তৈরি করেন। চারটি রথেই নিমকাঠের জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা থাকতেন। ১৮২৫সাল নাগাদ মহন্ত ভগবানদাস আচারীর সময়ে সোনার জলে পালিশ করা রুপোর রথ চালু হয়। রাজস্থান থকে কারিগর নিয়ে এসে রথ তৈরি করানো হয়। রথের সামনে রয়েছে রুপো দিয়ে তৈরি হাতি ও তার উপর মাহুত। রথের দিন এই রুপোর রথেই জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার সোনার বিগ্রহ বসানো হয়।
শোনা যায়, এই রথযাত্রা দেখতে একসময় নবাব ও স্থানীয় জমিদারদের আত্মীয় ও অতিথিরা আসতেন। আখড়ার রথযাত্রা ঘিরে সাতদিন ধরে নশিপুরে গ্রামীণ মেলা বসত। পরবর্তী সময়ে গঙ্গার ভাঙনে জগৎ শেঠের পুরনো বাড়িটি নদীগর্ভে হারিয়ে যায়। তবে প্রাচীন প্রথা মেনে এখনও প্রতিবছর সোজা ও উল্টোরথে রুপোর রথ সহ জাফরাগঞ্জ আখড়ার পাঁচটি রথ জগৎ শেঠের পুরনো বাড়ি ছিল, তার সামনে একটি মাঠে কিছুক্ষণ দাঁড়ায়। সন্ধ্যার আগেই রথ আখড়ায় ফিরে আসে।
আখড়ার বর্তমান মহন্ত রাঘবদাস আচারী বলেন, আষাঢ় মাসের দ্বিতীয়া তিথিতে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার মধ্য দিয়ে আখড়ার রথ উৎসব শুরু হয়। আখড়ায় রাখা দু’টি কাঠের ও দু’টি পিতলের রথ মেরামত ও ঘষামাজার কাজ চলে। জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার পরে ১০-১২দিন ধরে তেঁতুল, লেবু ও ছাই দিয়ে পিতলের রথ দু’টি মেজেঘষে ঝকঝকে করে তোলা হয়। সোজা রথের পাঁচদিন আগে রুপোর রথটি ধুয়েমুছে পরিষ্কার করা হয়। প্রায় ১০ফুট উঁচু রুপোর রথটি চাকা লাগানো লোহার পাটাতনে বসানো থাকে। কড়া পুলিসি নিরাপত্তায় ওই রথ পথে নামে। জেলার নানা প্রান্তের পাশাপাশি বীরভূম ও নদীয়া থেকেও অনেক মানুষ আখড়ার রথযাত্রা দেখতে আসেন।