শনি ও রবিবার থাকায় ব্যাপক পর্যটক সমাগম, তারাপীঠে দেবীই চড়েন রথে দর্শন পেতে ভক্তদের ভিড়
বর্তমান | ২৭ জুন ২০২৫
বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথ অষ্টাদশ শতাব্দীর আটের দশকে নাটোরের রাজা ও তারাপীঠের জমিদার সাধক রামকৃষ্ণের সহায়তায় তারামায়ের ব্যতিক্রমী রথযাত্রা উৎসবের সূচনা হয়েছিল। বামখ্যাপার আর্বিভাবের পর এই রথযাত্রা অন্য মাত্রা পায়। যার ধারাবাহিকতা আজও সমানে চলে আসছে। যত দিন যাচ্ছে ততই এই রথযাত্রার মাহাত্ম্য বাড়ছে। সারা বছর দেবী তারাকে একবার দর্শন পেতে ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বছরের এই একদিন দেবী-ই ভক্তদের দর্শন দিতে রথে চড়ে তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করেন। আর সেই টানেই ফি-বছর ভক্তদের ভিড় বাড়ছে। এবার রথের সঙ্গে শনি ও রবিবার থাকায় ভিড় কয়েকগুণ বেশি হবে বলে আশা মন্দির কমিটির।
সাধারণত জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে বসিয়ে রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। কিন্তু তারাপীঠে তারামা-ই জগন্নাথের প্রতিভূরূপে রথে আরোহন করেন। একাধারে তিনি কালী, অন্যদিকে তিনিই কৃষ্ণ। তারই সাক্ষাৎ পরিচয় এই রথ উৎসব। এই উৎসবের পরবর্তীকালে কলকাতার আশালতা সাধুখাঁ নামে এক ভক্ত রথঘর নির্মাণ করেন। ১৯৭০সালে যার উদ্ধোধন করেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী অজয় মুখোপাধ্যায়। সেইসময় গোরুর গাড়ির চাকাযুক্ত কাঠের তৈরি একটি রথে তারা মাকে বসিয়ে গোটা চণ্ডীপুর গ্রাম(বর্তমানে তারাপীঠ নামে পরিচিত) প্রদক্ষিণ করানো হতো। সেইসময় রথের দড়িতে টান দিতে স্থানীয় মানুষ ছাড়াও আশপাশের বাসিন্দারা ভিড় জমাতেন। বামাখ্যাপার আর্বিভাবের পর দেবীর রথযাত্রা উৎসব অন্য মাত্রা পায়। তারাপীঠ মন্দিরের গবেষক তথা সেবাইত প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সাধক বামা রথের দড়ি ধরে নিতাই-গৌরের মতো ‘হরেকৃষ্ণ, হরে রাম’ধ্বনি দিয়ে ভক্ত ও কীর্তনীয়াদের নিয়ে মেতে উঠতেন। বসত মেলা। বর্তমানে রথটি পিতলের করা হয়েছে। মা রথে চেপে আপামর ভক্তদের দর্শন ও আশীর্বাদ দিতে সাধারণের মাঝে হাজির হন। রথের দড়িতে টান দিয়ে মায়ের চলার পথ সুগম করতে পারলে সবরকম বিপদ থেকে মুক্তিলাভ ঘটে বলে অনেকে মনে করেন।
তবে সময় যত গড়িয়েছে তারা মায়ের রথের মাহাত্ম্য বেড়েছে। রথের দড়িতে টান দিতে রাজ্যবাসী ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, বিহার সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের মানুষ ভিড় জমান। অনেক ভক্ত কীর্তনীয়ার দলও বিভিন্নরকম বাজনা নিয়ে রথযাত্রায় শামিল হন। তারাপীঠ মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, বর্তমানে তারাপীঠে ডাবল লেনের রাস্তা হয়েছে। ফলে মা তারার রথ যাওয়ার ক্ষেত্রে আর কোনও অসুবিধা হয় না। এক লেন দিয়ে দেবীর রথ যায়। অন্য লেনে দাঁড়িয়ে তা দর্শন করবেন ভক্তরা। বিকেল ৩টের সময় মা গর্ভগৃহ থেকে বেরিয়ে এসে রথে আরোহন করবেন। দেবীকে রাজবেশে সাজানো হবে। রথের উপরে মাকে চিঁড়ে, বাতাসা, পেড়া দিয়ে পুজো নিবেদন করা হবে। অনেক ভক্ত চকোলেট নিবেদন করেন। পরে সেই প্রসাদ ভক্তদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেওয়া হয়। গোটা তারাপীঠ প্রদক্ষিণ করে সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ মা ফের মূল মন্দিরে ফিরে আসবেন। এরপরই বিশেষ পুজো ও সন্ধ্যারতি হবে। রাতে লুচি, সুজি ও পাঁচরকম ভাজা দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। তিনি বলেন, সারা দেশের মধ্যে একমাত্র তারাপীঠ ব্যতিক্রম। এখানে তারামাকেই অভেদ কল্পনাজ্ঞানে পুজো নিবেদন করা হয়।
লজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুনীল গিরি বলেন, রথযাত্রা ভালো বুকিং হয়েছে। অনেকে অনলাইনে হোটেল বুক করেছেন। এবার শুক্রবার রথযাত্রা ও পরের দু’দিন শনি এবং রবিবার হওয়ায় পর্যটকদের চাপ অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। এদিকে দেবীর রথযাত্রা চলাকালীন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে গোটা তারাপীঠের বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করা হয়। এবারও তার অন্যথা হবে না। সেই সঙ্গে ভক্তদের নিরাপত্তা ও ভিড় সামাল দিতে রাস্তার দু’ধারে পর্যাপ্ত পুলিস মোতায়েন করা হবে বলে জানিয়েছেন এসডিপিও গোবিন্দ সিকদার। • নিজস্ব চিত্র