এই সময়, কাকদ্বীপ ও গোসাবা: ফের নিম্নচাপের ভ্রুকুটি। দোসর অমাবস্যার ভরা কটাল। সুন্দরবনের উপকূল এলাকায় ভারী বর্ষণের আশঙ্কা। উত্তাল থাকবে নদী এবং সমুদ্র। বাড়বে জলস্তর। জলমগ্ন হতে পারে নিচু এলাকা।
হাওয়া অফিসের সতর্কবার্তা পাওয়ার পর গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে চলছে দফায় দফায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত। সঙ্গে বইছে দমকা হাওয়া। কটালের প্রভাবে নদী ও সমুদ্রের জলস্তর কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ দিন সকালে জোয়ারের সময় মৌসুনি দ্বীপে প্রবল জলোচ্ছ্বাস দেখা দেয় বঙ্গোপসাগরে। বাঁধ টপকে জল ঢুকতে শুরু করেছে লোকালয়ে। জলমগ্ন হয়ে পড়েছে হোমস্টে ট্যুরিজমের বেশ কয়েকটি কটেজ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, জলস্তর যেভাবে বেড়েছে, তাতে করে মাটির বাঁধ জিও শিট দিয়ে ঢেকে রাখা হলেও প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সমস্তটাই তছনছ হয়ে যাচ্ছে।
দুর্যোগের পূর্বাভাসে গভীর সমুদ্র থেকে সুন্দরবন উপকূলের নামখানা, সাগর, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা–সহ বিভিন্ন ঘাটে ফিরে এসেছে মৎস্যজীবীদের ট্রলার। উপকূল থানাগুলির পক্ষ থেকে মৎস্যজীবীদের সতর্ক করতে লাগাতার প্রচার চালানো হচ্ছে।
অন্যদিকে বৃষ্টির সঙ্গে নদী এবং সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে জেলার সাগর, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা, মৌসুনি ও ঘোড়ামারা দ্বীপের দুর্বল নদী এবং সমুদ্র বাঁধের উপর নজর রাখছে সেচ দপ্তর। ভাঙনের আতঙ্কে নতুন করে রাতের ঘুম উড়েছে উপকূল এলাকার বাসিন্দাদের।
গঙ্গাসাগরের ভাঙন প্রবণ একাধিক বাঁধ এ দিন ঘুরে দেখে যান নেদারল্যান্ডস থেকে আসা বিশেষজ্ঞরা। নেদারল্যান্ডস থেকে আসা দু’জনের একটি প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার এবং বুধবার গঙ্গাসাগরের উপকূল এলাকার ভাঙনস্থল পরিদর্শন করেন।
তাঁদের সঙ্গে ছিলেন সেচ দপ্তরের আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, গঙ্গাসাগরের সমুদ্র উপকূলের ভাঙন রুখতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে খুব শীঘ্রই বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে চলেছে সেচ দপ্তর।
সমুদ্রের গতিপ্রকৃতি নিয়ে সেচ দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন দুই বিশেষজ্ঞ। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর সেচ দপ্তরের কাছে একটি রিপোর্ট আকারে বেশ কিছু প্রস্তাব জমা দেবেন। আর সেই প্রস্তাবিত খসড়া ধরেই ভাঙন রোধের কাজ শুরু করবে সেচ দপ্তর।
সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা না পেয়ে সুন্দরবনের নদী এবং সমুদ্রবাঁধের ভাঙন রুখতে রাজ্য সরকার এককভাবে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সদা সর্বদা নজর রেখেছেন সুন্দরবনের উপর। কিন্তু প্রকৃতির কাছে আমরা সকলেই অসহায়। আগামী দিনে বিশেষজ্ঞদের পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সেচ দপ্তর ভাঙন রুখতে একাধিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে। যা খুব শীঘ্রই বাস্তবে রূপায়ণ হবে।’
এ দিন গোসাবা ব্লকের ছোটমোল্লাখালি গ্রাম পঞ্চায়েতের কালিদাসপুরে আচমকায় শার্শা নদীতে জলের ঢেউয়ের চাপে প্রায় ৯০ মিটার মাটির বাঁধ ধস নেমে তলিয়ে যায়। যে কোনও মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে নদীর নোনা জল গ্রামে ঢুকে প্লাবনের আশঙ্কা তৈরি হয়।
খবর পেয়ে সেচ দপ্তরের গোসাবা ডিভিশনের এসডিও শুভদীপ দালালের নেতৃত্বে সেচ দপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে জোয়ারের আগেই বিকল্প একটি বাঁধ তৈরি করেন যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। নতুন বাঁধের উপরে জিও শিট দিয়ে মুড়ে ফেলা হয়।
একই ভাবে গোসাবার বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজয়নগর গ্রামের দুর্গাদোয়ানিয়া নদীর বাঁধেও ১৫০ মিটার অংশে ফাটল দেখা দেয়। দিনভর বৃষ্টি ও নদীর জলস্তল বেড়ে যাওয়ার কারণে সেখানেও বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। সেচ দপ্তরের কর্মীরা ফাটল মেরামতের কাজ শুরু করেন।