দিগন্ত মান্না, পাঁশকুড়া
দুর্গাপুজোয় থিমের লড়াই দেখতে অভ্যস্ত বাঙালি। তাই বলে কিনা রথেও থিম? পাঁশকুড়ার পঞ্চমদুর্গার রথযাত্রায় থিমের রথ দেখতে প্রতি বছর উপচে পড়ে ভিড়। এবার এই রথযাত্রা পা দিল ৫৫ বছরে।
রথ উপলক্ষে শুরু হয়েছে গ্রামীণ মেলা। ভক্তি আর সংস্কৃতির মিশেলে পঞ্চমদুর্গার রথযাত্রা এলাকার মানুষজনের কাছে এক আবহমান আবেগ।
পাঁশকুড়ার মাইশোরা এবং কেশাপাট গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার সীমানায় পঞ্চমদুর্গা বাজার। আগে হাতে গোনা কয়েকটি দোকান ছিল বাজারে। আশেপাশে কোথাও রথযাত্রা হত না।
বাংলার ১৩৭৮ সালে স্থানীয় ডালপাড়া গ্রামের দুই কিশোর নিরঞ্জন দোলাই ও আশুতোষ পালের হাত ধরে শুরু হয় এই রথযাত্রা। শিশুদের রথযাত্রায় এগিয়ে এলেন বড়রাও। প্রথমে ডালপাড়া থেকে পঞ্চমদুর্গা বাজার পর্যন্ত টানা হত রথ।
বছর দশেক এভাএ চলার পর রথযাত্রা নিয়ে আগ্রহ দেখালেন পাশাপাশি পাঁচটি গ্রামের মানুষজন। প্রতিটি গ্রামের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হলো একটি কমিটি। ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠল ‘পঞ্চগ্রামী’ রথযাত্রা। কয়েক বছর পর ভেঙে যায় পঞ্চগ্রামী কমিটি।
বাংলার ১৩৯২ সালে ফকিরবাজার গ্রামের নগেন্দ্রনাথ ঘোড়াই দায়িত্ব নেন রথের। তাঁর বাড়িতে তৈরি হত রথ। সেই রথ টানা হত পঞ্চমদুর্গা বাজার পর্যন্ত। বছর পনেরো পর রথের দায়িত্ব নেন মোহনপুর গ্রামের মন্মথ জানা।
পরবর্তীকালে স্থানীয় বৃন্দাবনপুর গ্রামের মানুষজন রথের দায়িত্ব নিতে এগিয়ে আসেন। গ্রামের দুলাল দাস এবং নকুল দোলাই বিনা পারিশ্রমিকে বিভিন্ন থিম দিয়ে সাজিয়ে তুলতেন রথ।
এক এক বছর এক এক জায়গার মন্দিরের আদলে তৈরি করা হয় রথ। আগে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি হত রথ। বাঁশের কাঠামোর ওপর রঙিন কাগজ দিয়ে রথ সাজানো হত। পঞ্চমদুর্গার রথযাত্রা এলাকায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
ক্রমেই পঞ্চমদুর্গা বাজার বহরে বাড়তে শুরু করে। বাজারে ব্যবসায়ীর সংখ্যায় বেড়ে যাওয়ার পর পাকাপাকিভাবে রথযাত্রার দায়িত্ব নেয় পঞ্চমদুর্গা বাজার কমিটি। লোহার কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয় স্থায়ী রথ। প্রথা মেনে প্রতি বছর নানারকম থিমে সাজিয়ে তোলা হয় রথ।
প্রতিবার রথের দাতা হিসেবে কেউ না কেউ এগিয়ে আসেন। দাতার বাড়ি থেকে পঞ্চমদুর্গা বাজার হয়ে রথ যায় ডালপাড়া গ্রামের জয়দেব দাসের বাড়িতে। কয়েক দশক ধরে জয়দেব দাসের বাড়িটিকে জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
রথ উপলক্ষে ন’দিন ধরে চলে মেলা। মেলায় ভিড় উপচে পড়ে। ফেরত রথের দিন জয়দেবের বাড়ি থেকে দাতার বাড়ি পর্যন্ত রথ টানা হয়। এবারও হয়েছে রথযাত্রার আয়োজন। রথ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা।
শুরু হয়েছে রথের মেলাও। পঞ্চমদুর্গা রথযাত্রা কমিটির সভাপতি তপন দোলইয়ের কথায়, ‘এই রথের মেলায় দূর দুরান্ত থেকে মানুষজন আসেন। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে এই রথযাত্রা চলে আসছে।
১৩৭৮ সালে স্থানীয় ডালপাড়া গ্রামের যে দুই কিশোর এই রথযাত্রার প্রচলন করেছিলেন তাঁদের মধ্যে একজন বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গিয়েছেন। অন্যজন এখনও যুক্ত আছেন রথের সাথে। এই রথযাত্রা এলাকার মানুষের কাছে আবেগের।’