মহম্মদ মহসিন, আমতা
হাওড়ার আমতা থানার তাজপুরের রায় পরিবারের রথ ৪০০ বছরে পা দিল। রায়বাড়ির রথ নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম ‘শ্রীধর রথ’। জগন্নাথের বদলে এখানে রথে উপবিষ্ট হন রায় পরিবারের কুলদেবতা শ্রীধর।
পরম্পরা মেনে এই রথের রশি টেনে প্রতি বছর রথযাত্রার সূচনা করেন স্থানীয় একটি মুসলিম পরিবারের সদস্যরা। বংশপরম্পরায় তাঁরাই রথযাত্রার যাবতীয় ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকেন।
রথযাত্রাকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতির এই নিদর্শন ভূ-ভারতে আর কোথাও রয়েছে কি না, সন্দেহ। হাওড়ার বাগনানের কড়িয়া থেকে আমতার নারিটের পথে চক স্টপেজ। সেখান থেকে গ্রামের রাস্তা চলে গিয়েছে বেতাই বন্দরের দিকে।
সেই রাস্তার অদূরেই রায়দের বসতবাড়ি। বাড়ির পাশেই পুরোনো মন্দিরে রোজ পূজিত হন রায়বাড়ির কুলদেবতা শ্রীধর, যা আদতে একটি শালগ্রাম শিলা। রায়দের বসতভিটা থেকে কয়েকশো মিটার দূরে রাস্তার ধারে টিনের ঘরে রাখা থাকে রায়বাড়ির রথ।
রথযাত্রার দিন মন্দির থেকে শ্রীধরকে বের করে এনে পালকিতে নিয়ে যাওয়া হয় রথে। প্রথা মেনে মোট সাতজন ব্রাহ্মণ এই কাজটা সম্পন্ন করেন। তারপরে শুরু হয় রথ টানা। সেই কাজে মুখ্য ভূমিকা নেন তাজপুরের লাগোয়া সারদা গ্রামের কাজি পরিবার।
গত প্রায় একশো বছর ধরে এই গুরুদায়িত্ব পালন করে আসছে মুসলিম পরিবারটি। বর্তমানে এই দায়িত্ব বর্তেছে পরিবারের অন্যতম সদস্য সাকু কাজির উপরে। তার আগে এই দায়িত্ব সামলেছেন সাকুর বাবা খালেক কাজি।
সেই ইতিহাস শোনাচ্ছিলেন রায় পরিবারের অন্যতম বর্ষীয়ান সদস্য মানস রায়। তাঁর বয়স এখন সত্তরের কাছাকাছি। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেল, তাজপুরের রায় পরিবারের লোকেরা এক সময়ে বর্ধমান মহারাজের দেওয়ান ছিলেন।
তাঁদের একজন হলেন দুর্লভ রায়। দুর্লভের উত্তরাধিকারী ছিলেন মুকুট রায়। প্রায় ৪০০ বছর আগে তদানীন্তন বর্ধমান মহারাজের অনুরোধে মুকুট রায় তাজপুর গ্রামে এই রথযাত্রার প্রচলন করেন।
তখন তাজপুর ছিল এক গন্ডগ্রাম। যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনকার মতো ছিল না। তবু রথযাত্রায় মানুষের উৎসাহের কোনও খামতি ছিল না। রথযাত্রা উপলক্ষে বিশাল মেলা বসতো। আশপাশের গ্রামের মানুষ তাতে সামিল হতেন।
১৯৪৬-এ বাংলা জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। তার আঁচ লেগেছিল তাজপুর গ্রামেও। সেই অশান্ত পরিস্থিতিতে রথ টানা হবে কি না, তা নিয়ে দোটানায় পড়েছিল রায় পরিবার। তখনই ঢাল হয়ে এগিয়ে আসেন পাশের গ্রামের বাসিন্দা খালেক কাজি।
মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক হয়েও তিনি রায় পরিবারের লোকেদের অভয় দিয়েছিলেন, প্রতি বছর যেমন রথ টানা হয়, তেমনই হবে। রথযাত্রা কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।
তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রথ টানার ব্যবস্থা করেন। সেটা দেখার পরে রায় পরিবারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, এ বার থেকে রথের রশি টানবেন খালেক কাজি। মানসের কথায়, ‘সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। খালেক না থাকলেও তাঁর ছেলে এখন রথের রশি ধরেন। বলতে পারেন, এটাই আমাদের রথের বিশেষত্ব।’
সাকু বলেন, ‘এটা আমাদের কাছে একটা মিলন উৎসব। সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই রথযাত্রায় অংশ নেন। এটাই আমাদের বাংলার সংস্কৃতি।’
১৯৪৬-এ বাংলা জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। তার আঁচ লেগেছিল তাজপুর গ্রামেও। সেই অশান্ত পরিস্থিতিতে রথ টানা হবে কি না, তা নিয়ে দোটানায় পড়েছিল রায় পরিবার। তখনই ঢাল হয়ে এগিয়ে আসেন পাশের গ্রামের বাসিন্দা খালেক কাজি।
মুসলিম সম্প্রদায়ের লোক হয়েও তিনি রায় পরিবারের লোকেদের অভয় দিয়েছিলেন, প্রতি বছর যেমন রথ টানা হয়, তেমনই হবে। রথযাত্রা কোনও ভাবেই বন্ধ করা যাবে না। তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।
তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রথ টানার ব্যবস্থা করেন। সেটা দেখার পরে রায় পরিবারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়, এ বার থেকে রথের রশি টানবেন খালেক কাজি। মানসের কথায়, ‘সেই ট্র্যাডিশন এখনও চলছে। খালেক না থাকলেও তাঁর ছেলে এখন রথের রশি ধরেন। বলতে পারেন, এটাই আমাদের রথের বিশেষত্ব।’
সাকু বলেন, ‘এটা আমাদের কাছে একটা মিলন উৎসব। সব সম্প্রদায়ের মানুষ এই রথযাত্রায় অংশ নেন। এটাই আমাদের বাংলার সংস্কৃতি।’
এলাকার ভূমিপুত্র তথা আমতার বিধায়ক সুকান্ত পাল বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই এই রথের সঙ্গে যুক্ত আছি। সব সম্প্রদায়ের মানুষ এতে অংশ নেন। রথের মেলাকে ঘিরে গোটা এলাকা উৎসবের চেহারা নেয়।’