মানুষকে সঙ্গে নিয়েই এগিয়ে চলেছে ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ জুন ২০২৫
দেবাশিস দাস
২২ বছরে পদার্পণ করল ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ সংবাদপত্রটি। পাঠকেরা জানেন, এটি ‘দ্য স্টেটসম্যান’ গ্রুপের বাংলা কাগজ। স্বাভাবিকভাবেই এই কাগজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি বড় ঐতিহ্যের উত্তরাধিকার। ‘দ্য স্টেটসম্যান’ গত শতকে শিক্ষিত বাঙালির কাছে ছিল একটি বৌদ্ধিক আভিজাত্যের প্রতীক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে সত্যজিৎ রায়ের মতো মানুষদের কাছেও ‘দ্য স্টেটসম্যান’ ছিল অত্যন্ত প্রিয়। পরবর্তী সময়ে এই পত্রিকাটি বাংলা সংস্করণ প্রকাশের কথা চিন্তা করা হয় এবং বাঙালি পাঠকদের মধ্যে একটি চাহিদাও তৈরি হয়। সেই মতো ২০০৪ সালের ২৮ জুন প্রথম প্রকাশিত হয় ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ সংবাদপত্র। প্রথম দিন ১২ পৃষ্ঠার মূল সংবাদপত্রের সঙ্গে ৩৬ পৃষ্ঠার ক্রোড়পত্র যোগ করে মোট ৪৮ পৃষ্ঠার ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ প্রকাশিত হয়েছিল।
অনেকেই নিশ্চয় মনে করবে সে সময় ছিল বামফ্রন্ট সরকারের প্রবল দাপট। ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ প্রকাশিত হওয়ার কয়েকমাস পশ্চিমবাংলায় ঘটে যায় সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলন। সেই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ ও আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ প্রতিফলন দেখা গিয়েছিল ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’-এর প্রতিটি পৃষ্ঠায়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে সমর্থন জুগিয়েছিল দৈনিক স্টেটসম্যান। শহর থেকে শহরতলি এবং প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই সংবাদপত্র। সাধারণ মানুষের এই তীব্র আন্দোলনের সমর্থনে এই সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় কলম ধরেছিলেন হীরেন মুখোপাধ্যায়, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, মহাশ্বেতা দেবী, সুকুমারী ভট্টাচার্য, শঙ্খ ঘোষ, শাঁওলী মিত্র, তপন সিনহা, শুভাপ্রসন্ন, বিভাস চক্রবর্তী প্রমুখ বাংলার চিন্তাশীল জগতের এক একজন ব্যক্তিত্ব। সে সময় ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’-এর মুদ্রিত সংখ্যা ছিল লক্ষাধিক। বিভিন্ন প্রতিরোধ এলেও সে সব অবলীলায় অতিক্রম করে এগিয়ে গেছে এই নবজাতক সংবাদপত্রটি। ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়লে এর সঙ্গে নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে নানান ধরনের বিভাগ। যেমন– রবিবারের সাহিত্যের পাতা ‘বিচিত্রা’, শনিবারে ছোটদের পাতা ‘রংবেরং’, শুক্রবার বিনোদনের পাতা। এছাড়াও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, ভ্রমণ, সাংস্কৃতিক খবরাখবর এবং জীবনশৈলী বিষয়ক ফিচার নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকে। তার জনপ্রিয়তাও বিশেষভাবে উল্লেখ করতেই হয়।
সত্যি বলতে কী, করোনাকালে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের মতো আমাদের দেশের মানুষকেও বহু প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। সে সময় প্রতিটি সংবাদপত্রের মুদ্রণ সংখ্যার উপর তার প্রভাব পড়েছিল। সে সময় নিয়মিত সংবাদপত্র প্রকাশ করাই আমাদের কাছে একটি প্রবল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছিল। কিন্তু সেই প্রতিকূলতাকে তোয়াক্কা না করে সমস্তরকম পরিশ্রম ও মেধার সাহায্যে আমরা এগিয়ে গিয়েছি। আর আমরা আরও নতুনরূপে এবং নিত্যনতুন সংবাদ থেকে বিভিন্ন বিষয়কে তুলে ধরছি পাঠকের কাছে। সেই সঙ্গে বিশেষ বাংলা নববর্ষ সংখ্যা এবং শারদীয় সংখ্যা আমাদের প্রতিষ্ঠানের অন্যতম এক একটি উজ্জ্বল ফসল। সাধারণ মানুষ থেকে শিল্পী-সাহিত্যিক এবং সিনেমা-সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক জগতের বিশিষ্ট মানুষেরাও যুক্ত হয়েছেন আমাদের বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে।
এ কথা সুবিদিত যে, বিশাল সংবাদ জগতের বাইরেও শিল্প-সাহিত্য-সিনেমা-সঙ্গীত বাঙালি মানসের একটি অনিবার্য চাহিদার বিষয়। সে কথা আমরা কখনও ভুলি না। তাই বাঙালির এই সব চাহিদা পূরণেও আমরা সব সময় সক্রিয়। এছাড়াও প্রতিদিন প্রকাশিত হয় খেলা বিষয়ক একটি পূর্ণ পৃষ্ঠা। সব মিলিয়ে আমরা বিভিন্ন পাঠকের বিভিন্ন মানসিক রুচিকে অনেকটাই পরিতৃপ্ত করতে পেরেছি। এ বিষয়ে পাঠকদের এবং সেই সঙ্গে বিজ্ঞাপনদাতাদের আমরা কখনও ভুলি না। জনমানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা সব সময় এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে। আগামী দিনেও এই অঙ্গীকারই হবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র।