ভিন্ রাজ্য থেকে অটোর শংসাপত্র! কর ফাঁকির প্রবণতায় চিন্তা
আনন্দবাজার | ২৭ জুন ২০২৫
নির্দিষ্ট পারমিট অনুযায়ী অন্য রাজ্যে যাওয়ার অনুমতি নেই। এ দিকে, অনলাইনে ভিন্ রাজ্য থেকে গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র জোগাড় করে নিয়ে আসছেন কিছু গাড়ির মালিক। বাণিজ্যিক গাড়ির মালিকদের একাংশের এই প্রবণতায় বিস্মিত পরিবহণ দফতরের কর্তারা। এই ছবি দেখা যাচ্ছে কলকাতা সংলগ্ন আলিপুর আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরে, গত মে পর্যন্ত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার প্রায় ৫০০টি গাড়ির ক্ষেত্রে রাজস্থান, বিহার থেকে গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র জোগাড়ের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।
কিন্তু কেন এই কারচুপির প্রবণতা? পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, রাজ্যে গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র নেওয়ার আবেদনের আগে বিভিন্ন বকেয়া কর এবং জরিমানা মেটানো বাধ্যতামূলক। বহু ক্ষেত্রে এই জরিমানা এবং কর এড়াতেই এমন কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে বলে অভিযোগ।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিপুল অঙ্কের বকেয়া জরিমানা ফাঁকি দিতেই এই পন্থা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধুমাত্র আলিপুরের ক্ষেত্রেই এই কারণে গত মে পর্যন্ত প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় ধাক্কা খেয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্যের অন্যান্য জেলার ক্ষেত্রেও এমন ঘটনা ভূরি ভূরি ঘটছে বলে শোনা যাচ্ছে।
অটো বা ছোট মালবাহী গাড়ি, যেগুলির ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার কথাই নয়, সেগুলির ক্ষেত্রেও এমন নজির মিলেছে বলে পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর। বেশ কিছু ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট গাড়ি আদৌ ভিন্ রাজ্যে গিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়েছে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, নির্দিষ্ট পথের টোল প্লাজ়াতেও ওই সব গাড়ির হদিস মিলছে না বলে দাবি।
তা হলে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হচ্ছে কী ভাবে? পরিবহণ দফতর সূত্রের খবর, কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক বেসরকারি মালিকানায় কিছু রাজ্যে স্বয়ংক্রিয় পরীক্ষা কেন্দ্রে গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছে। কেন্দ্রের নির্দিষ্ট পোর্টালের মাধ্যমে ভিন্ রাজ্য থেকে গাড়ির সেই শংসাপত্র নেওয়া যায়। কিন্তু সেই ব্যবস্থায় দালাল মারফত গাড়ির ছবি পাঠিয়ে কারচুপি করে স্বাস্থ্য পরীক্ষার শংসাপত্র বার করারও অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নজরে আসার পরে বিভিন্নগাড়ির নম্বর ধরে ধরে খোঁজ করতে গিয়ে এই নজির সামনে আসছে বলে জানাচ্ছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। পরিবহণ দফতরের মাধ্যমে কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণ মন্ত্রককেও চিঠি লিখে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে বলে খবর। নথিভুক্ত গাড়ির ক্ষেত্রে এই ‘অনিয়ম’ ধরা পড়ার পরে আঞ্চলিক পরিবহণ কার্যালয় গাড়ির মালিকদের নোটিস পাঠিয়ে শুনানিতে ডাকছে। তার ভিত্তিতে গাড়ির শংসাপত্রের বৈধতা যাচাই করে সিদ্ধান্ত হচ্ছে বলে পরিবহণ দফতর জানাচ্ছে।
সূত্রের খবর, কর ফাঁকি দিয়ে যে ভাবে অবৈধ উপায়ে শংসাপত্র বার করা হচ্ছে, তাতে রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি হওয়া ছাড়াও গাড়ির সুরক্ষা ব্যাহত হচ্ছে। এমন আশঙ্কা করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ। গাড়ির অস্তিত্ব সম্পর্কেনিশ্চিত হওয়া ছাড়াও সেটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করা প্রয়োজন বলে জানান এক আধিকারিক।
গাড়ির মালিকদের কর ফাঁকি দেওয়ার এই প্রচেষ্টা রুখতে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকে অভিযোগ জানানো ছাড়াও নিজস্ব নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা।