মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৌশলকেই হাতিয়ার করে তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। যে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প ভোটে জেতার প্রশ্নে মমতার তুরুপের তাস, এ বার বঙ্গনারীর মন জিততে সেই লক্ষীর ভান্ডার ধাঁচের প্রকল্প অন্য নামে রাজ্যে চালু করতে চাইছে বিজেপি। দলের দাবি, বর্তমান সরকার যে অর্থ দিচ্ছেন ভোটে জিতলে তার চেয়ে বেশি অর্থ পাবেন বাংলার মহিলারা। ফি মাসে তৃণমূলের থেকে বেশি অর্থ পাওয়ার প্রলোভন মমতার মহিলা ভোটব্যাঙ্কে ধস নামাবে বলেই আশা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বের কটাক্ষ, ‘‘মহারাষ্ট্র, দিল্লিতে মহিলাদের আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েও তা রাখতে পারছে না বিজেপি। বাংলার মানুষ তা জানেন।’’
বিজেপি নেতৃত্বের মতে, পশ্চিমবঙ্গে মেরুকরণের হাওয়া থাকলেও হিন্দু ভোট, বিশেষত হিন্দু মহিলাদের সমর্থন পাওয়ার প্রশ্নে বড় বাধা হল বর্তমান সরকারের লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। যে প্রকল্পের কারণে গ্রাম-বাংলায় মহিলারা ঢেলে ভোট দিয়ে থাকেন তৃণমূলকে। বিধানসভার আগে মমতার সেই মহিলা ভোটব্যাঙ্কে সিঁধ কাটতে মহিলাদের তৃণমূলের থেকে বেশি আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কৌশল নিয়ে এগোতে চাইছে বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় এক নেতার কথায়, ‘‘এ বার ভোটের আগে বাংলার অর্ধেক আকাশের মন জিততে লক্ষ্মীর ভান্ডারের মতো আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করার পথে হাঁটতে পারে দল। প্রকল্পের নাম হয়তো আলাদা হবে। লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের মোকাবিলায় বিজেপি যে মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দেবে তা ঘোষণা করার কথা মোটের উপরে ভেবে রাখা হয়েছে।’’
২০২১ সালে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পে প্রতি মাসে আর্থিক ভাবে দুর্বল মহিলাদের হাতে টাকা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে ওই আর্থিক সাহায্য করা হয়ে থাকে বলে তৃণমূল দাবি করে। তবে বিজেপির দাবি, ওই প্রকল্প টাকার বিনিময়ে ভোট কেনা ছাড়া কিছু নয়। গোড়ায় খয়রাতির ওই রাজনীতির বিরুদ্ধে একাধিক বার মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। এ ধরনের জনমোহিনী নীতির কারণে একাধিক রাজ্যের আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলেও সে সময়ে সরব হতেন মোদী। কিন্তু পরে দেখা যায় জনগণের মন পেতে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মতোই সেই খয়রাতির রাস্তাতেই হাঁটতে হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বকে। ভোটে জিততে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে মহিলাদের হাতে মাসিক নগদ অর্থ তুলে দেওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করতে হয় বিজেপিকে। এ বার পশ্চিমবঙ্গেও সেই পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
মহিলাদের মন জিততে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের আগে আম আদমি পার্টির সরকারও পশ্চিমবঙ্গের ধাঁচে রাজধানীর মহিলাদের মাসিক ২১০০ টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। গোড়ায় কেজরীওয়ালের জনমোহিনী নীতির বিরোধিতা করলেও, শেষবেলায় আপকে টেক্কা দিতে দিল্লিতে জিতলে মহিলাদের মাসিক ২৫০০ টাকা করে আর্থিক ভাতা দেওয়ার ঘোষণা করে বিজেপি। গেরুয়া শিবিরের বিশ্লেষণ, ওই ঘোষণা দিল্লিতে মহিলাদের মন জিততে সাহায্য করে বিজেপিকে। পশ্চিমবঙ্গে মমতার অন্যতম তুরুপের তাস হল লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প। সেই অস্ত্রকে ভোঁতা করতে আরও বেশি অর্থ দেওয়ার ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে তৃণমূলের বক্তব্য, ‘‘মহারাষ্ট্রে ও দিল্লিতে প্রতিশ্রুতি দিয়ে জিতে এসে এখন মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার প্রকল্প বন্ধ করতে পারলে বাঁচেন। ঝাড়খণ্ডেও এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু লাভ হয়নি। পশ্চিমবঙ্গেও হবে না।’’