ঘাটাল প্ল্যানে টাকা নয়, রাজ্যকে ঋণ নিতে বলল কেন্দ্র
আনন্দবাজার | ২৭ জুন ২০২৫
পশ্চিম মেদিনীপুরে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের টাকা দেওয়ার দায় মোদী সরকার কার্যত নিজের ঘাড় থেকে ঝেড়ে ফেলল। তার বদলে রাজ্য সরকারকে আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরামর্শ দিল।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রী চন্দ্রকান্ত আর পাটিল আজ জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা চাইলে এই প্রকল্পের জন্য বাইরের কোনও সংস্থার থেকে আর্থিক সাহায্য নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্র প্রয়োজনমতো সাহায্য করবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যে বন্যা নিয়ন্ত্রণের নতুন প্রকল্পে ঢালার মতো যথেষ্ট টাকা নেই, সেই ইঙ্গিত মিলেছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়। পাটিল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারকে বলে দেওয়া হয়েছে, তারা ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো সংস্থার থেকে টাকা চাইতে পারে।’’
মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক থেকে রাজ্য সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য টাকা জোগাড় করতে পারলে তার জন্য যে কেন্দ্রের যে ছাড়পত্র লাগে, তা কেন্দ্র দিয়ে দেবে। অসম সরকার ব্রহ্মপুত্রের বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বিক প্রকল্পে ঋণ নিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই পথে হাঁটতে পারে।
কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আজ এই কথা বলে নিজের পাপস্খালন করল। এত বছর ধরে প্রকল্পে অনুমোদন দেওয়ার পরেও কেন্দ্রীয় সরকার ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের জন্য এক টাকা দেয়নি। আর দেবেই বা কোথা থেকে? কেন্দ্রীয় বাজেটে বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য মাত্র ৪১২ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে। তা থেকে অসম, বিহারের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যকে টাকা দেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বসে নেই। রাজ্য নিজেই এই প্রকল্প করবে। ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। তার মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা মঞ্জুরও হয়ে গিয়েছে।
১৯৫৯ সালে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের পরিকল্পনা প্রথম শোনা গিয়েছিল। তার পরে ১৯৮২ সালে শিলাবতী নদীর পাড়ে এই প্রকল্পের শিলান্যাস হয়। বরাদ্দ হয়েছিল টাকা। তবে কাজ এগোয়নি। ঘাটালের সাংসদ দেবের একাধিক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রকের তরফেও স্বীকার করা হয়েছে, ২০১৮-তে মন্ত্রকের উপদেষ্টা কমিটি পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জন্য ঘাটাল মাস্টাল প্ল্যান বিবেচনা করেছিল। প্রায় ১২৩৯ কোটি টাকা খরচ করে এর প্রযুক্তিগত ও আর্থিক কার্যকারিতা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়।
২০২২-এ এই প্রকল্পে লগ্নির সিদ্ধান্তে ছাড়পত্র দেওয়া হয়, কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পে কোনও টাকা দেয়নি। বন্যা নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সহায়তার জন্য এই প্রকল্প তালিকাভুক্ত হয়নি।