• মাদক-মামলায় ১৭ পুলিশকর্মীর শাস্তি, প্রশিক্ষণে পাঠাতে নির্দেশ
    এই সময় | ২৭ জুন ২০২৫
  • এই সময়: গুরুতর গোলমালটা সামনে এসেছিল বছর তিনেক আগেই। বিভিন্ন জেলা আদালতে মাদক-মামলার বিচারের সময়ে ধৃতদের আর শনাক্তই করতে পারছিলেন না তদন্তকারী পুলিশ অফিসাররা!

    পুলিশের এই চিনতে না পারার পিছনে ষড়যন্ত্র, ‘ইচ্ছাকৃত বিস্মরণ’ রয়েছে বলেই মনে করেছিল হাইকোর্ট। এ রকম সবক’টি মামলা এক করে হাইকোর্ট বিচার শুরু করে।

    বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চের নির্দেশ মেনে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার সব থানাকে সতর্ক করে জানিয়ে দেন, আগামী দিনে এমন ঘটনা সামনে এলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে।

    একই সঙ্গে রাজ্য পুলিশ জেলা ধরে ধরে তালিকা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, গত সপ্তাহে সেই রিপোর্ট দিয়েছে আদালতে।

    সেই তালিকা ও রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে বিচারপতি অজয়কুমার মুখোপাধ্যায় অভিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের ন্যূনতম ছ’মাসের জন্যে পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তাঁরা মাদক মামলার তদন্তের বিশদ প্রশিক্ষণ নেন।

    আদালতের নির্দেশ, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পরে যদি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ওই সব অফিসার, তবেই আগামী দিনে তাঁদের মাদক মামলার তল্লাশি বা তদন্তে যুক্ত করা যাবে।

    যে পুলিশ অফিসার গোপন খবর পেয়ে তল্লাশি চালিয়ে মাদক সমেত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে আনছেন, বিচার–পর্বে তিনিই চিনতে পারছে না অভিযুক্তকে—ডোমকল, ভীমপুর, চাকুলিয়া––এ রকম হাফ ডজনের বেশি থানার মাদক মামলায় পুলিশের একই রকম ভূমিকা সামনে আসার পরে ২০২৩-এ কড়া পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিল হাইকোর্ট।

    সেই অনুযায়ী, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের চিহ্নিত থানাগুলির অফিসারদের তালিকা করে হাইকোর্টে দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে রাজ্য পুলিশের তরফে হাইকোর্টে রিপোর্ট জমা পড়ে।

    আপাতত সাতটি মামলায় যুক্ত ১৭ জন পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের কথা জানানো হয়েছে। বিভাগীয় তদন্ত ছাড়াও তাঁদের একটি করে প্রোমোশন আটকে দেওয়া হয়েছে।

    তদন্তকারী অফিসার ও মাদকের তল্লাশিতে যাওয়া পুলিশের অভিযুক্তকে চিনতে না পারার পিছনে রহস্য রয়েছে বলেই মনে করেছিল হাইকোর্ট। এই প্রবণতা যাতে আর পুলিশের মধ্যে ছড়িয়ে না-পড়ে, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার সিপিকে সতর্ক করা হয়েছিল।

    হাইকোর্ট এই বিষয়ে পুলিশকে কাঠগড়ায় তুললেও হাইকোর্টে কর্মরত সরকারি আইনজীবীদের বড় অংশ এ ক্ষেত্রে জেলার আদালতে সরকারি কৌঁসুলিদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেম।

    তাঁদের বক্তব্য, একটা মামলা রুজু হওয়ার ১০–১৫ বছর পরে ট্রায়াল হয়। ততদিনে সংশ্লিষ্ট পুলিশ অফিসার আরও অনেক থানা ঘুরে ফেলেন। অভিযুক্তেরও চেহারায় অনেক বদল আসে।

    ফলে ট্রায়ালে না চিনতে পারা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু যিনি সরকারি কৌসুঁলি, ট্রায়ালের আগে তাঁরই সাক্ষীকে আগাম সব মনে করানোর কথা। সেটা করা হলে এমন গোলমাল ঘটে না। এই সব মামলায় জেলা আদালতে দায়িত্বে থাকা সরকারি কৌঁসুলিদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা উচিত।

  • Link to this news (এই সময়)