• উদ্দেশ্য ছিল মিলনমেলা, প্রায় আড়াইশো বছর পরেও অমলিন মহিষাদলের কাঠের রথের যাত্রা...
    আজকাল | ২৭ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: মহিষাদলবাসীদের অন্যতম গর্ব, ২৪৯ বছরের ঐতিহ্য বহন করে চলেছে মহিষাদলের রথযাত্রা উৎসব। রাজবংশের পৃষ্ঠপোষকতায় এই রথযাত্রার সূচনা হয় ১৭৭৬ সালে, রানী জানকি দেবীর উদ্যোগে। মিলনমেলার উদ্দেশ্যে রথ নির্মাণ শুরু হলেও, তা তাঁর জীবদ্দশায় শুরু হয়নি। পরে ১৮০৫ সালে রাজবংশের মতিলাল পাঁড়ে (উপাধ্যায়)-এর সময় সেই রথ প্রথম রথযাত্রায় ব্যবহৃত হয়।

    পুরী ও মাহেশের পর, ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও বিশিষ্ট রথযাত্রা হিসেবে মহিষাদলের রথের পরিচিতি রয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, এটি ভারতের একমাত্র সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি রথ, যা 'মদনগোপাল জিউ'-র রথ নামে খ্যাত। মদনগোপাল জিউর সঙ্গে রথে থাকেন জগন্নাথ দেব ও রাজবাড়ির শালগ্রাম শিলা শ্রীধর জিউ।

    রথের নকশা ও গঠনশৈলীও এককথায় অনন্য। প্রথম দিকে রথে ছিল সতেরোটি চূড়া, বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে তেরোতে। এই বিশাল কাঠের রথটির উচ্চতা প্রায় ৫৫ ফুট, তবে কলস ও ধ্বজা বসানোর পরে তা ৭০ ফুটেরও বেশি হয়ে দাঁড়ায়। রথে রয়েছে লোহার পাত দিয়ে মোড়া ৩৪টি চাকা, যার প্রতিটির উচ্চতা ৪ ফুট, বেধ ৮ ইঞ্চি এবং পরিধি প্রায় ১২ ফুট।

    প্রথম রথ নির্মাণে খরচ হয়েছিল প্রায় চৌষট্টি হাজার টাকা—যা সেই সময়কার হিসেবে বিশাল অঙ্ক। আজও রাজবাড়ির ঐতিহ্য মেনেই পালিত হয় রথযাত্রা। রাজপরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মিলিত অংশগ্রহণে এই উৎসব শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, সামাজিক মিলনমেলাও বটে। মহিষাদলের এই রথযাত্রা আজও ইতিহাস, শিল্প ও সংস্কৃতির এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত হয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুরের গর্বে।
  • Link to this news (আজকাল)