রথযাত্রার পবিত্র দিনে এক হৃদয়বিদারক ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়াল বীরভূমের তারাপীঠ থানা এলাকায়। প্রেমিকের হাতে প্রেমিকা খুন এবং পরদিন সকালেই প্রেমিকের আত্মহত্যায় মৃত্যু হল দু'জন তরুণ-তরুণীর। মন্দিরচত্বরের উল্লাস ও ভক্তিময় পরিবেশের মাঝেই ঘটনাটি এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে দিল শোকের ছায়া।
ঘটনায় মৃত প্রেমিকার নাম সুস্মিতা বায়েন। তাঁর বাড়ি তারাপীঠ থানার বাতিনা গ্রামে। অভিযুক্ত এবং পরে আত্মঘাতী হওয়া প্রেমিকের নাম বিক্রম মাল, বাড়ি খামেড্ডা গ্রামে। পুলিশ সূত্রে খবর, দীর্ঘদিন ধরেই দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তবে মেয়ের পরিবারের তরফে সম্প্রতি অন্যত্র তাঁর বিয়ের কথা পাকা করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে বিক্রম বুধবার গভীর রাতে সুস্মিতার বাড়িতে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। পরিবারের সদস্যরা চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং রক্তাক্ত অবস্থায় সুস্মিতাকে উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই মর্মান্তিক ঘটনার রেশ কাটার আগেই বৃহস্পতিবার সকালে সাহাপুর গ্রামের একটি ইটভাটায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া যায় বিক্রম মালকে। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
দুই মৃত্যুই আপাতত প্রেমঘটিত কারণে
তারাপীঠ থানার পুলিশ জানিয়েছে, দুই মৃত্যুই আপাতত প্রেমঘটিত কারণেই হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ধারালো অস্ত্র এবং অন্য কিছু সম্ভাব্য প্রমাণ। মৃত প্রেমিকার পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি, তবে তদন্ত চলছে।
মা তারার মন্দিরে যখন রথের চাকা গড়ানোর প্রস্তুতি
রথের দিন ভোরে তারাপীঠের মা তারার মন্দিরে যখন রথের চাকা গড়ানোর প্রস্তুতি চলছিল, তখন এই দুঃখজনক ঘটনার খবর পেয়ে মন্দির চত্বরেও ছড়িয়ে পড়ে স্তব্ধতা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বলেন, 'রথের দিন এমন ঘটনা চোখে দেখা যায় না। মনটাই খারাপ হয়ে গেল।'
এই ঘটনায় এলাকায় এখনও থমথমে পরিবেশ। প্রশ্ন উঠছে—যদি সম্পর্কের টানাপোড়েন আগে থেকেই ছিল, তাহলে কীভাবে এমন ঘটনা এড়ানো যেত? প্রশাসনও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সম্পর্ক বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দিতে চাইছে।