সহবাস, জোর করে গর্ভপাত, কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ
দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৭ জুন ২০২৫
মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে এক মহিলার সঙ্গে সহবাসের অভিযোগ উঠেছে। নবগ্রাম থানায় অভিযোগ জমা পড়েছে। কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্তে নেমেছে নবগ্রাম থানার পুলিশ। লালবাগের এসডিপিও আকুলকর রাকেশ মহাদেব বলেন, মামলা রুজু হয়েছে। নির্যাতিতার শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের এই মহারাজ আগেও বিতর্কে জড়িয়েছেন। চলতি বছরই আধ্যাত্মিকতায় পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন কার্তিক মহারাজ। গেরুয়া বসনধারী কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ঘিরে আলোড়ন পড়েছে।
অভিযোগ, এক স্কুলে চাকরি দিয়ে মহিলার অসহায়তার সুযোগ নিয়েছিলেন কার্তিক মহারাজ। তাঁকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ। অভিযোগকারিণী বহরমপুরের বাসিন্দা। সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে মহিলাকে একটি স্কুলে চাকরি দেন তিনি। স্কুলেরই আবাসনের ৫ তলায় থাকতে শুরু করেন ওই মহিলা। ধীরে ধীরে কার্তিক মহারাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয়। এরপরেই মহিলা অন্তস্বত্তা হয়ে পড়েন। প্রায় ৬-৭ মাস মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল কার্তিক মহারাজের। তারপর মহিলাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই মহিলার গর্ভপাতও করানো হয় বলেও অভিযোগ।
মাসে মাসে বেতন পৌঁছে যাবে বাড়িতে, ন্যক্কারজনক এই ঘটনার পর এমনটাই বলা হয়েছিল মহিলাকে। অভিযোগ, সেই প্রতিশ্রুতিও রাখেননি কার্তিক মহারাজ। বরং বহরমপুরের একটি নার্সিংহোমে জোর করে নির্যাতিতার গর্ভপাত করানো হয়। নার্সিংহোমের মালিক তথা চিকিৎসক এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ও আরেক মহিলার উপস্থিতিতে তাঁর গর্ভপাত করানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন নির্যাতিতা।
২০১৯ সাল পর্যন্ত তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেছেন মহিলা। এরপর তিনি দীর্ঘ সময় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। গত ১২ জুন তিনি কার্তিক মহারাজের মোবাইলে ফের ফোন করেন। ফোনে প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি জানান তিনি। পরের দিন অর্থাৎ, ১৩ জুন বহরমপুর সংশোধনাগারের পাশে জেলা সংখ্যালঘু দপ্তরের সামনে নির্যাতিতাকে অপেক্ষা করতে বলেন কার্তিক মহারাজ।
নির্যাতিতার বক্তব্য, ‘মহারাজের বলে দেওয়া ওই স্থানে অপেক্ষা করছিলাম। দু’জন ব্যক্তি একটি গাড়িতে করে এসে সামনে দাঁড়ায়। জানানো হয়, কার্তিক মহারাজ তাঁকে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি পাঠিয়েছেন। গাড়িতে ওঠার পর আমাকে ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হয়। কার্তিক মহারাজের সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করা হয়। এরপর গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়।’ এই ঘটনার পর তিনি আতঙ্কে ছিলেন বলে জানিয়েছেন নির্যাতিতা।
বৃহস্পতিবার রাতে নবগ্রাম থানায় কার্তিক মহারাজের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন মহিলা। তাঁর উপর অত্যাচারের ঘটনায় বিচারের দাবি করেছেন তিনি। এদিকে রঘুনাথগঞ্জে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এসে অভিযোগ প্রসঙ্গে কার্তিক মহারাজ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা নিয়ে আমার আইনজীবী যা বলার বলবেন। এটা নিয়ে আমি বিচলিত নই। কোন মহিলা কী অভিযোগ করেছেন, আমার জানা নেই।’
প্রসঙ্গত, ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের বেলডাঙা শাখার সন্ন্যাসী স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজ। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে, মুর্শিদাবাদে কার্তিক মহারাজকে কটাক্ষ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মে মাসেও বহরমপুরে এসে জেলা প্রশাসনিক কার্যালয়ে দাঁড়িয়ে নাম না করেই কার্তিক মহারাজকে ফের নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। বহুবার বাংলায় শাসকদলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কার্তিক মহারাজ।