• মাওবাদী আতঙ্ক কাটিয়ে বিগ বাজেটের পুজোর প্রস্তুতি জঙ্গলমহল পিড়াকাটাতে
    এই সময় | ২৭ জুন ২০২৫
  • একসময় মাওবাদী আতঙ্কে প্রায় বন্ধই হতে বসেছিল পুজো। জঙ্গলমহল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের পিড়াকাটা একসময় 'মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর' হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে এখন পরিবর্তন হয়েছে অবস্থার। মাওবাদী আতঙ্ক কাটিয়ে পুজোর আনন্দে মেতেছে পিড়াকাটা। পিড়াকাটা বাজার দুর্গোৎসব কমিটির পুজো এ বার ৮ম বর্ষে পড়ল। তাঁদের এ বারের পুজোর থিম 'অপারেশন সিঁদুর।' পহেলগামে সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা এবং তারপর ভারতীয় সেনার পাল্টা অভিযানে পাকিস্তানের একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে দেওয়ার ঘটনাই উঠে আসবে থিমে। শুক্রবার দুপুরে হয়ে গেল পিড়াকাটা বাজার দুর্গাপূজা কমিটির খুঁটিপুজো। উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুজয় হাজরা। পুজো উদ্যোক্তারা বলেন, প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার মণ্ডপে আলোকসজ্জা ও অ্যানিমেশনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হবে ‘অপারেশন সিন্দুর’এর মুহূর্ত। আকাশে উড়বে রাফাল, সুখোই। দেখানো হবে S-400 মিসাইল সিস্টেম। জঙ্গি ঘাঁটি থেকে সেনা ক্যাম্প; কর্নেল সোফিয়া কুরেশি ও উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং-এর সাংবাদিক বৈঠক, সবকিছুই ফুটিয়ে তোলা হবে মন্ডপ সজ্জায়।

    পুজো কমিটির সভাপতি প্রবীর সাউ জানান, মণ্ডপ ও থিমের সাথে মানানসই প্রতিমাও হবে পুজোর মূল আকর্ষণ। কোষাধ্যক্ষ গৌতম দাস বলেন, পুজোর পাশাপাশি, ওই ৫ দিন ধরে চলবে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, অন্নকূট বিতরণ, রক্তদান ও বস্ত্রদান শিবির। মণ্ডপ, প্রতিমা এবং এই অনুষ্ঠানের জন্য বাজেট ধরা হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা। উল্লেখ্য, গত কয়েক বছরে মন্ডপ, প্রতিমা কিংবা পরিবেশের বিচারে জেলার অন্যতম সেরা পুজো হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে পিড়াকাটা বাজার দুর্গাপূজা কমিটির এই পুজো। তবে, এ বারের আয়োজন তথা বাজেট সবকিছুই ছাড়িয়ে গিয়ে জেলার শ্রেষ্ঠ পুজো হিসেবে স্বীকৃতি পাবে বলে আশাবাদী পুজো উদ্যোক্তারা।

    ১৫ বছর আগের মাওবাদী হামলার সেই দিনগুলো এখনও তাড়া করে বেড়ায় পিড়কাটার বাসিন্দাদের। পুজো কমিটির সদস্যরা জানাচ্ছেন, সেই ভয়াবহ আতঙ্কের দিনগুলিতে (২০০৮-'১০) গ্রামের একমাত্র দুর্গাপুজোও প্রায় বন্ধ হতে বসেছিল। সন্ধ্যার আগেই নামত অন্ধকার। বাড়ি থেকে বেরোনো যেত না। সরকার পরিবর্তনের পর অবশ্য পরিস্থিতিরও পরিবর্তন হয়েছে। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়েছে জনজীবন। ২০১৮ সালের পরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনী ব্লকের সেই মাও 'আঁতুড়ঘর' পিড়াকাটাতে দুর্গাপুজোর সংখ্যাও এক থেকে বেড়ে দুই হয়েছে। সর্বজনীন দুর্গাপুজো ছাড়াও বাজার কমিটির সদস্যদের উদ্যোগে ধুমধাম কারে আয়োজিত হচ্ছে পিড়াকাটা বাজার দুর্গাপূজা কমিটির পুজো। প্রথম বছরই শালবনী ব্লকের সেরা পুজো এবং জঙ্গলমহলের অন্যতম সেরা পুজোর শিরোপা পেয়েছিল এই পুজো। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে বিশ্ববাংলা শারদ সম্মানেও ভূষিত হয়েছে। এবারও যে তার ব্যতিক্রম হবেনা, তা নিয়ে আশাবাদী পিড়কাটার বাসিন্দারা।

  • Link to this news (এই সময়)