• রথ নিয়ে এল দুর্গার আগমনী বার্তা, শুরু কাঠামো পূজা
    আজকাল | ২৮ জুন ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার রথযাত্রার দিন আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া। নিভৃতবাস থেকে বেরিয়ে এই দিনে  রথে চড়ে বলরাম ও সুভদ্রাকে নিয়ে মাসির বাড়ি যান জগন্নাথদেব। প্রভু জগন্নাথদেবের রথযাত্রার সঙ্গে বাঙালির দুর্গাপুজোর এক অমলিন  সম্পর্ক রয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন প্রথা মেনে আজও সোজা রথের দিন কাঠামো পুজোর মধ্যে দিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর শহরের বিখ্যাত 'সেন বাড়ি'তে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। ১৮৯৬ সালে অবিভক্ত বাংলার সাবজাজ বাবু রাধাকৃষ্ণ সেন বহরমপুরে তাঁর নিজের বাড়িতে এই দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন। তাঁর পরিবারের সদস্যরা পুরনো নিয়ম রীতি মেনে সেই দুর্গাপুজো চালিয়ে আসছেন। 

    সেন পরিবারের সদস্য সুবীর সেন বলেন,' আমাদের বাড়ির দুর্গাপুজোর মধ্যে নতুনত্ব কিছু নেই। প্রাচীনত্ব এবং নিষ্ঠাভরে  রীতি মেনে চলাই আমাদের অহংকার।' তিনি বলেন,'বাবু রাধাকৃষ্ণ সেনের সময় থেকেই  সোজা রথের দিন কাঠামো পুজোর মাধ্যমে আমাদের বাড়িতে দুর্গাপুজোর সূচনা হয়। সেই রীতি মেনে আজ সোজা রথের দিন কাঠমো পুজো করে পাটাতন শুদ্ধ করার মধ্যে দিয়ে দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের কাজ শুরু হল।' সুবীরবাবু ,বলেন 'বাড়ির ঠাকুর দালানে আজ থেকে প্রতিমা নির্মাণ শুরু হলেও ভাদ্র মাসে আমাদের বাড়িতে  ঠাকুর তৈরির কাজ বন্ধ থাকে। আশ্বিন মাসের মহালয়ার দিন দেবী মহামায়ার চক্ষুদান করা হয়।'

    তিনি জানান,'পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িতে প্রতিমা পুজো শুরু হয়।  ওই দিন সাত ধরনের ফল , কদম ফুল এবং বেল পাতা দিয়ে বিশেষ একটি 'রচনা' তৈরি করে টাঙানো হয়, যা আমাদের পরিবারের দুর্গাপুজোর এক অনন্য বৈশিষ্ট। আমাদের বাড়ির পুজো বৈষ্ণব মতে হয়। তাই এখানে রক্তপাত নিষিদ্ধ। তাই সন্ধিপুজোর সময় আখ এবং চালকুমড়ো বলি হয়।' সেন বাড়ির দুর্গাপুজোতে দেবী দুর্গাকে রান্না করে অন্ন ভোগ দেওয়া হয় না। তার পরিবর্তে লুচি ভোগ দেওয়া হয়। সুবীরবাবু জানান,' সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর দিন দেবীর উদ্দেশ্যে সাতেরটি নৈবেদ্য দেওয়া হয়।  বারকোষে ১০৮টি প্রদীপ সাজিয়ে পুজো করা হয়। দেবীর মুখের স্বাদ বদলানোর জন্য নবমী পুজোর দিন মায়ের উদ্দেশ্যে পটল পোড়া ,কলার বড়া সহ একাধিক ভিন্ন স্বাদের ভোগ নিবেদন করা হয়।'

    সেন বাড়ির পুত্রবধূ সুলেখা সেন বলেন ,'কাঠামো পুজোর দিন থেকেই আমাদের বাড়িতে পুজো পুজো একটা ভাব চলে আসে। আমাদের বাড়ির পুজোতে বিভিন্ন ধরণের রীতি মানতে হয় , যা আজ আমরা নিষ্ঠা ভরে পালন করি।' তিনি বলেন ,'আমাদের বাড়ির পুজোতে কলাবৌকে যে হলুদ শাড়ি পরানো হয় তা একটি বিশেষ পদ্ধতি মেনে তৈরী করা ও রং করা হয়। পুজোর দিনগুলোতে আমাদের বাড়িতে প্রচুর আত্মীয়-স্বজন এবং সাধারণ মানুষের সমাগম হয়। আমরা সকলের সঙ্গে আনন্দের সঙ্গে পুজোর দিনগুলো কাটাই। ' প্রাচীন রীতি মেনে আজও সেন বাড়ির দুর্গা প্রতিমা বেহারাদের কাঁধে চেপে নিরঞ্জনের জন্য বের হয়। দশমীর পুজো শেষে বহরমপুরে ভাগীরথীর ঘাটে দেবীর নিরঞ্জন হয়।
  • Link to this news (আজকাল)