• কসবা কাণ্ড: দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়ে অপরাজিতা বিলের পক্ষে সওয়াল তৃণমূলের
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ জুন ২০২৫
  • দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজের মধ্যে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে চাঞ্চল্য। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে একজন ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র। বাকি দু’জনের একজন কলেজের পড়ুয়া এবং আরেকজন কলেজের কর্মী। দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকার একটি নামী আইন কলেজে ঘটেছে এই কাণ্ড। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০-এর মধ্যে ওই ঘটনা ঘটে। এরপর কসবা থানায় আসেন নির্যাতিতা। তিনজনের বিরুদ্ধে গণধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। এরপর পুলিশি তৎপরতায় গ্রেপ্তার করা হয় অভিযুক্তদের।

    বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে সিদ্ধার্থশঙ্কর শিশু রায় উদ্যানের সামনে থেকে মনোজিৎ মিশ্র (৩১) ও জাইব আহমেদ (১৯)-কে আটক করে কসবা থানার পুলিশ। ওই রাতেই পুলিশ প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০) নামে অন্য এক অভিযুক্তের সন্ধান পায়। পরে তিনজনকে গণধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র ওই কলেজের প্রাক্তনী এবং পেশায় আইনজীবী। বর্তমানে তিনি কলেজের কর্মী বলে দাবি করেছেন অনেকে। অভিযোগ পাওয়ার পর তরুণীর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়। সাক্ষীদের বয়ানও রেকর্ড করে পুলিশ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। ইতিমধ্যেই কলেজের সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পাশাপাশি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে ফরেনসিক টিম।

    ধৃত তিনজনের কাছ থেকেই নিয়ে নেওয়া হয়েছে তাঁদের মোবাইল ফোন। শুক্রবার ধৃতদের আদালতে হাজির করিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে চায় পুলিশ। বিচারক চারদিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিকে কসবার এই ঘটনায় ভুয়ো তথ্য রটালেই ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ডিসিপি যাদবপুর ডিভিশন কলকাতার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই মর্মে আগাম সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত চলছে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। পুলিশের আর্জি, ‘আমরা প্রত্যেক ব্যক্তি এবং সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের বলা হচ্ছে যাচাই না করে ভুয়ো তথ্য প্রচার করবেন না। তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

    পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, ‘আইন কলেজের ছাত্রীর তরফে যৌন হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নিয়েছে কসবা থানার পুলিশ। বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে এফআইআর দায়ের হয়েছে। মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের ১ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনা করে অত্যন্ত দক্ষতা এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে এই ঘটনার তদন্ত চলছে।’

    কলেজের জিএস পদের লোভ দেখিয়ে তরুণীকে একটি রুমে ডেকে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ। প্রশ্ন উঠছে, কলেজের এক প্রাক্তন ছাত্র (একাংশের দাবি, তিনি কলেজের কর্মী) কীভাবে এত রাতে কলেজে ঢুকলেন? নিরাপত্তারক্ষীরাই বা কোথায় ছিলেন? আর এত বড় ঘটনা ঘটে গেল কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ টের পেল না? বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, অভিযুক্তেরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। যদিও সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, তিনি বর্তমানে কলেজের কর্মচারী। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নন।’

    কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল নয়না চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাকে নাইট গার্ড শুক্রবার সকালে বলেন, পুলিশ থেকে লোক এসেছিল। কলেজের ২টো রুম সিল করা হয়েছে।’ ভাইস প্রিন্সিপাল আরও বলেন, ‘ওই আইন কলেজের গভর্নিং বডির সুপারিশে অস্থায়ী চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন অভিযুক্ত মনোজিৎ মিশ্র। অফিসিয়াল কিছু কাজ করতেন মনোজিৎ।’ তৃণমূলের তরফেও কসবার ঘটনার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। দলের এক্স হ্যান্ডল থেকে একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘কলকাতা পুলিশ তিনজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোরতম ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হচ্ছে।’ ফের একবার অপরাজিতা বিল-এর পক্ষে সওয়াল করা হয় তৃণমূলের এক্স হ্যান্ডলে। এই বিল বাস্তবায়িত করার জন্য বিজেপি কোনও পদক্ষেপ করেনি, সেই অভিযোগও করেছে রাজ্যের শাসকদল।

    এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লিখেছেন, ‘কসবার ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি। এসব জানোয়ারকে মেরে পিঠের চামড়া গুটিয়ে দেওয়া উচিত। পুলিশ এদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করুক।’ এদিকে এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে বিজেপি। শুক্রবার কসবা থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় এআইডিএসও এবং গেরুয়া শিবিরের কর্মী-সমর্থকরা। দক্ষিণ কলকাতার ওই আইন কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখায় কংগ্রেস। এদিকে, এই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিতভাবে রিপোর্ট তলব করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতার নগরপালকে ঘটনা সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)