আরজি কর-কাণ্ডের পর বছর না ঘুরতে কলকাতারই আইন কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণ! ধৃতদের তৃণমূল-যোগে সরব বিরোধীরা
আনন্দবাজার | ২৭ জুন ২০২৫
কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে এক চিকিৎসক-পড়ুয়াকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে এক বছরও কাটেনি। এ বার দক্ষিণ কলকাতার একটি আইন কলেজে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল। ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে। তাঁদের মধ্য এক জন কলেজের প্রাক্তনী এবং বর্তমান কর্মী। অন্য দু’জন এখনও ওই কলেজের পড়ুয়া। এই তিন জনেরই তৃণমূল-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। তার পরেই সরব বিরোধীরা। রাজ্যের শাসকদল মেনে নিয়েছে, মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে এ-ও জানিয়েছে, এখন কোনও পদে নেই তিনি। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় দোষীদের কড়া সাজা দাবি করেছে তৃণমূল। ধর্ষণের এই ঘটনায় বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে বলেও দাবি তাদের।
বুধবার কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ‘নির্যাতিতা’। তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। ‘নির্যাতিতা’র অভিযোগের ভিত্তিতেই এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার একে একে ধরা পড়েন অভিযুক্ত তিন জন। এই ঘটনায় পুলিশি সক্রিয়তার কথা তুলে ধরেছেন রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। তাঁর মন্তব্য, এ রাজ্যের সরকার নারী নির্যাতনে দোষীদের শাস্তির জন্য বিল এনেছে। দোষীদের মালা পরিয়ে বরণ করেনি। ধর্ষকদের জামিনের পরে যেমনটা করা হয়েছিল গুজরাতে। তাঁর অভিযোগ, ‘রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া’ হয়ে যাওয়া দলগুলি বিভিন্ন ভাবে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছে।
বিরোধীরা যদিও এ সব শুনতে নারাজ। শুক্রবার ওই ল কলেজের সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং কংগ্রেস। বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের দাবি, সাউথ কলকাতা ল কলেজকে কেন্দ্র করে ‘অপরাধচক্র’ চালিয়ে এসেছে তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসন সকলে চুপ। তারা আরজি করের ঘটনার প্রসঙ্গও তুলেছে। তাদের দাবি, আরজি কর দেখিয়ে দিয়েছে, এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা কোনও কলেজ ক্যাম্পাসেই সুরক্ষিত নন। এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) দাবি করেছে, মূল অভিযুক্ত দক্ষিণ কলকাতা টিএমসিপি-র সম্পাদক পদে রয়েছেন। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একহাত নিয়েছেন রাজ্য সরকারকে। জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে নারীরা সুরক্ষিত নন। তৃণমূল যদিও পাল্টা জানিয়েছে, যে অভিযুক্তদের সঙ্গে টিএমসিপির যোগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী নন। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্য বিধানসভায় নারী সুরক্ষার জন্য অপরাজিতা বিল পাশ করানো হলেও তা আইনে পরিণত হয়নি। কারণ, তাতে এখনও সম্মতি দেননি রাষ্ট্রপতি। এই প্রসঙ্গে বিজেপি শাসিত রাজ্যে নির্যাতনের প্রসঙ্গও তুলেছে তারা।
গ্রেফতার তিন
কলকাতায় ল কলেজের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে এক জন ল কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং কর্মী। বাকি দু’জন কলেজের বর্তমান পড়ুয়া। বুধবার, ২৫ জুনের এই ঘটনার পর নির্যাতিতা তরুণী কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করানো হয় পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে। অভিযুক্তদের মধ্যে দু’জনকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয়। তৃতীয় জনকে মধ্যরাতে ধরে পুলিশ। ধৃতদের শুক্রবার আলিপুরের আদালতে হাজির করানো হয়। তিন অভিযুক্তের মধ্যে এক জন কলেজ ক্যাম্পাসের ভিতরে তরুণীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ। নির্যাতিতার দাবি, ২৫ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে।
তৃণমূলের ছাত্রনেতা
ধৃতদের নাম বা পরিচয় প্রথমে প্রকাশ করেনি পুলিশ। তবে এক জনকে ‘এম’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সূত্রের খবর, তিনি তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) সঙ্গে যুক্ত। বাকি দুই ধৃতকে ‘জে’ এবং ‘পি’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরে ধৃতদের নাম প্রকাশ্যে আসে। অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে যে ‘এম’-এর নাম উঠে আসছে, তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলে তৃণমূলের ছাত্র পরিষদের পরিচয় রয়েছে। সেখানে নিজেকে তিনি দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়েছেন। অভিযোগ, বাকি দুই ধৃতও টিএমসিপির সঙ্গে সক্রিয় ভাবে যুক্ত। কলেজের অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় জানান, অভিযুক্তদের এক জন ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেন। জিবি রেজ়লিউশনের মাধ্যমে ৪৫ দিনের জন্য তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছিল। জিবি প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ ও যুব সংগঠনের সভাপতি সার্থক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘যে অভিযুক্তদের সঙ্গে টিএমসিপির যোগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী নন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ সংবাদমাধ্যমে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সে বর্তমানে কলেজের কর্মচারী। ছাত্র পরিষদের সঙ্গে যুক্ত নয়। যদি এই ঘটনা ও অভিযোগ সত্যি হয়, তার বিরুদ্ধে ১০০ শতাংশ আইনানুগ ব্যবস্থা যাতে নেওয়া হয় এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যাতে হয়, তার জন্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদ লড়বে।’’
মহিলা কমিশনের পদক্ষেপ
ধর্ষণের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে তারা। কসবার ধর্ষণ মামলায় কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা তিন দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট আকারে কমিশনের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। কসবার ওই আইন কলেজের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পরেই বিবৃতি জারি করে মহিলা কমিশন। তারা জানিয়েছে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পদক্ষেপ করা হয়েছে। কমিশনের চেয়ারপার্সন বিজয়া রহাটকর এ ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লিখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে আইন মেনে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
কসবাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুক্রবার রাস্তায় নামে বিরোধীরা। কসবা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি এবং কংগ্রেস। পথ অবরোধও করে তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে নেমে কয়েক জনকে পুলিশ আটক করে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, তাঁদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে। বিজেপি-কংগ্রেসের মতো ডিএসও, এসএফআই-ও প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। ডিএসও মিছিল করেছে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের সামনে। শাসকদলকে বিঁধে এসএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক দেবাঞ্জন দে-র বক্তব্য, ‘‘সাউথ কলকাতা ল কলেজকে কেন্দ্র করে অপরাধচক্র চালিয়ে এসেছে তৃণমূল। পুলিশ-প্রশাসন সকলে চুপ। আরজি করের ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে, এ রাজ্যের ছাত্রছাত্রীরা কোনও কলেজ ক্যাম্পাসেই সুরক্ষিত নন। একই ঘটনা ঘটল সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে।’’ এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ) দাবি করেছে, মূল অভিযুক্ত দক্ষিণ কলকাতা টিএমসিপি-র সম্পাদক পদে রয়েছেন। বাকিদের সঙ্গেও টিএমসিপির যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেছে বিজেপির ছাত্র সংগঠন। অভিযুক্তেরা সংগঠনের কোনও পদে নেই বলে পাল্টা দাবি করেছে তৃণমূল। দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূল ছাত্রপরিষদ ও যুব সংগঠনের সভাপতি সার্থক বলেন, ‘‘যে অভিযুক্তদের সঙ্গে টিএমসিপির যোগের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ছাত্র পরিষদের পদাধিকারী নন। আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’’ কসবাকাণ্ডে রাজ্যের নারীসুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘মমতার আমলে যে নারীসমাজ সুরক্ষিত নয়, তা দক্ষিণ কলকাতার কলেজের বোনের উপর নির্যাতনের ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে। রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতার কমিশনার এখন মমতার সঙ্গে দিঘার রথের উৎসবে ব্যস্ত। নিরাপত্তা নিয়ে কাজের সময় কোথায়? রথের দিনে এমন বেদনার খবর শুনতে হচ্ছে। যত দিন মুখ্যমন্ত্রী, ফিরহাদ, জাভেদ খান (কসবার বিধায়ক) থাকবে, তত দিন চলবে।’’
তৃণমূল ‘যোগ’
কসবার ল কলেজে ধর্ষণে অভিযুক্ত ‘এম’-এর তৃণমূল যোগ আরও ‘স্পষ্ট’ হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের সঙ্গে অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসায়, তা নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা। অভিষেকের সঙ্গে অভিযুক্তের যে ছবিটি প্রকাশ্যে এসেছে, তা দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে, ছবিটি অনেক পুরনো। এ ছাড়াও অভিযুক্তকে যে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ছবিতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন, তৃণমূল বিধায়ক দেবাশিস কুমার, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভ্রাতৃবধূ কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য এবং তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দক্ষিণ কলকাতা জেলা সভাপতি সার্থক। এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সে তো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের সঙ্গে ব্রিজভূষণ এবং সেই প্রজ্জ্বল রেভান্নাদের ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী যে টুইট করছেন, সেই টুইটেও ধর্ষকদের সঙ্গে ছবি রয়েছে। বংশগোপাল চৌধুরী, সুশান্ত ঘোষেদের সঙ্গেও তো সিপিএম নেতাদের ছবি রয়েছে। তাতে কী এল-গেল! পাবলিক লাইফে এগুলো হয়। এতে যদি আমাদের কৈফিয়ত দিতে হয় তো ওঁদেরও দিতে হবে।’’
নির্যাতিতার বিবৃতি
পুলিশের কাছে ঠিক কী জানিয়েছেন ‘নির্যাতিতা’? বয়ানে কার কার বিরুদ্ধে তাঁর অভিযোগ? অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছে আনন্দবাজার ডট কম। অভিযোগপত্রে মোট তিন জনের নাম রয়েছে। মূল অভিযুক্তকে তাঁর নামের আদ্যক্ষর ‘জে’ দিয়ে সম্বোধন করেছেন ‘নির্যাতিতা।’ বাকি দু’জনকে সম্বোধন করেছেন ‘এম’ এবং ‘পি’ বলে। অভিযোগ, ‘জে’ যখন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে তাঁর উপর নারকীয় অত্যাচার করছেন, তখন ‘এম’ এবং ‘পি’ তার নীরব দর্শক এবং কখনও কখনও সাহায্যকারীর ভূমিকা নিয়েছেন। তরুণীর অভিযোগ, অনুনয়-বিনয় করেও তিনি রেহাই পাননি। পায়ে পড়েছেন। উল্টে মিলেছে হুমকি। শারীরিক নির্যাতনের সময় হকি স্টিক দিয়ে মারধর করতেও উদ্যত হন অভিযুক্ত।
কসবাকাণ্ডের তদন্তে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ। ঘটনাস্থলে তার আগেই গিয়েছিল ফরেন্সিক দল। সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহও করেছে তারা। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত সিপি সন্তোষ পাণ্ডে এবং ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতাও। সন্ধ্যা ৬টার একটু পরে ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন অতিরিক্ত সিপি। বেরোনোর সময় সন্তোষ বলেছিলেন, ‘‘পুলিশ ইউনিয়ন রুম, গার্ডরুম সব ঘুরে দেখেছে। এই মুহূর্তে ফরেন্সিক টিমও ভিতরে নমুনা সংগ্রহ করছে।’’
‘অসহায়’ সাক্ষী
অভিযোগকারিণীর দাবি অনুযায়ী, তাঁকে যখন ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন কলেজের দুই ছাত্রনেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়াও আরও এক জনের কথা বলেছেন কলেজছাত্রী। তিনি কলেজের রক্ষী। যিনি ঘটনার সময় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের মূল দ্বারের রক্ষীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। অভিযোগ, গত ২৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট, প্রায় ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে কলেজের গার্ডস রুমে অকথ্য নির্যাতন চলে আইনের ছাত্রীর উপর। ‘নির্যাতিতা’ শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী। পুলিশকে দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, কলেজের প্রাক্তনী তথা প্রভাবশালী নেতার প্রেম তথা বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অভিযুক্তকে সহায়তা করেছেন আরও দু’জন। তা ছাড়াও এক জন ছিলেন অকুস্থলে। ওই কলেজ ছাত্রীর দাবি, ওই ব্যক্তি অসহায় ছিলেন। তাঁকে ডেকেও সাহায্য পাননি। বস্তুত, তরুণীর বয়ান অনুযায়ী, ওই রক্ষীকে তাঁর দায়িত্ব থেকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়ে দুই অভিযুক্ত কলেজের গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন!
তৃণমূলের বক্তব্য
কসবার ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে তৃণমূল। ওই ঘটনায় শুক্রবার দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে তারা। সেই সঙ্গেই বিরোধীদের একহাত নিয়ে রাজ্যের শাসকদল জানিয়েছে, নারীর শরীর ‘রাজনীতি করার যুদ্ধক্ষেত্র’ নয়। রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজারর কটাক্ষ, বিরোধীরা নির্যাতিতার প্রতি সমব্যথী নন। তাঁরা আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে চলছেন। কসবার ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত তিন জনেরই তৃণমূল-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এই নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ঘটনায় অভিযুক্ত যে তৃণমূলেরই সদস্য, তা-ও মেনে নিয়েছে তৃণমূল। তাঁদের কঠোর শাস্তির দাবিও জানিয়েছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, অভিযুক্ত কোন দল করেন, তা এখানে প্রশ্ন নয়। দোষীর বিচার করতে হবে। এই নিয়ে বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএমের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন তৃণমূল নেতা কুণালও।