• এক ‘অসহায়’ সাক্ষী রয়েছেন কসবার কলেজে ধর্ষণের! কে তিনি? নির্যাতিতাই জানিয়েছেন পুলিশকে দেওয়া লিখিত বয়ানে
    আনন্দবাজার | ২৭ জুন ২০২৫
  • স্থান পূর্ব কলকাতার কসবা। ঘটনাস্থল সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ। গত বুধবার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে যেখানে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক কলেজছাত্রী। আইনের ওই ছাত্রী শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী। মূল অভিযুক্তও ছাত্র সংগঠনের নেতা। অভিযোগকারিণীর দাবি অনুযায়ী, তাঁকে যখন ধর্ষণ করা হচ্ছিল, তখন কলেজের দুই ছাত্রনেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। যাঁদের ‘এম’ এবং ‘পি’ বলে পুলিশের খাতায় সম্বোধন করেছেন নির্যাতিতা। মূল অভিযুক্ত সেখানে ‘জে।’ তা ছাড়াও আরও এক জনের কথা বলেছেন কলেজছাত্রী। তিনি কলেজের রক্ষী। যিনি ঘটনার সময় সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের মূল দ্বারের রক্ষীর দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। কী ভূমিকা ছিল তাঁর?

    অভিযোগ, গত ২৫ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিট, প্রায় ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট ধরে কলেজের গার্ডস রুমে অকথ্য নির্যাতন চলে আইনের ছাত্রীর উপর। ‘নির্যাতিতা’ শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের কর্মী। পুলিশকে দেওয়া অভিযোগপত্রে তিনি লিখেছেন, কলেজের প্রাক্তনী তথা প্রভাবশালী নেতার প্রেম তথা বিয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ‘অপরাধে’ তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। অভিযুক্তকে সহায়তা করেছেন আরও দু’জন। তা ছাড়াও এক জন ছিলেন অকুস্থলে। কলেজছাত্রীর কথায়, ওই ব্যক্তি ছিলেন অসহায়। তাঁকে ডেকেও সাহায্য পাননি। বস্তুত, তরুণীর বয়ান অনুযায়ী, ওই রক্ষীকে তাঁর দায়িত্ব থেকে একপ্রকার সরিয়ে দিয়ে দুই অভিযুক্ত কলেজের গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন!

    নির্যাতিতা জানিয়েছেন, মোট দু’দফায় তাঁর উপর শারীরিক নির্যাতন হয়েছিল। প্রথমে ইউনিয়ন রুমে, তার পরে গার্ডস রুমে। সেই সময়ে কলেজের মূল গেটে এক রক্ষী ছিলেন। অভিযোগপত্রের এক জায়গায় ছাত্রী লিখেছেন, ‘‘ইউনিয়ন রুমের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল (বন্ধ করেন ‘এম’ এবং ‘পি’)। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পুরোটা ঘটে যায়। ‘জে’ আমাকে ‘ওয়াশরুমের’ দিকে টেনে নিয়ে যান এবং জোর করতে থাকেন শারীরিক সম্পর্কের জন্য। আমি বারংবার ‘না’ বলতে থাকি। বাধা দিতে থাকি ওঁকে। কেঁদে ফেলি। ওঁকে অনুরোধ করি, আমায় ছেড়ে দিতে। কিন্তু কোনও কথাই শোনেননি। আমার উপর আরও জোর খাটাতে থাকেন। আমি ভয়ে পেয়ে যাই। ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হয় আমার। শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। তখন ‘জে’ হাঁক দিয়ে ডাকেন ‘এম’ এবং ‘পি’-কে। আমি ওঁদের অনুরোধ করি, আমায় রুবি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে। কারণ, আমার শরীর খারাপ লাগছে। কিন্তু কেউ কথা শোনেননি। তখন ওঁদের অনুরোধ করি, একটি ইনহেলার অন্তত এনে দিতে। ‘এম’ তাতে সাড়া দেন। ইনহেলার নেওয়ার পর কিছুটা ঠিক হই আমি।’’

    ছাত্রীর সংযোজন, ‘‘নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে প্রায় পালাতে যাচ্ছিলাম। কিন্তু দেখলাম, ওঁরা মেন গেট বন্ধ করে দিচ্ছেন! আমি গার্ডের (গেটে দাঁড়ানো রক্ষী) কাছে সাহায্য চাই। কিন্তু উনি অসহায় ছিলেন। আমায় সাহায্য করেননি। ‘এম’ এবং ‘পি’ আবার জোর করে আমায় ইউনিয়ন রুমে নিয়ে যান। আমি ‘জে’-এর কাছে কাকুতি-মিনতি করি। আমি ওঁর পা পর্যন্ত ধরি। উনি ‘এম’ এবং ‘পি’ কে বলেন, আমায় গার্ডস রুমে নিয়ে যেতে। এবং সেখানে উপস্থিত রক্ষীকে বলে বাইরে বসতে।’’

    তার পর দীর্ঘ সময় ধরে তরুণীর উপর শারীরিক নির্যাতন চলে বলে অভিযোগ। নিজেকে ছাড়াতে গিয়ে একটা সময়ে তিনি হাল ছেড়ে দেন। নিজেকে ছেড়ে দেন ‘ধর্ষকের’ হাতে। ছাত্রীর কথায়, ‘‘অর্ধমৃত অবস্থায় পড়েছিলাম আমি। আমায় ধর্ষণ করে উনি উঠে দাঁড়ান। আমি একটা সময়ে যখন উঠে দাঁড়ালাম, বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম, তখনও ভেসে এল হুমকি— ‘কেউ যেন না জানে। এই কথা যেন ইউনিয়নেরও কারও কানে না যায়।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)