• ‘নারীশরীর রাজনীতির যুদ্ধক্ষেত্র নয়’! কসবার কলেজে ধর্ষণের ঘটনায় কঠোরতম শাস্তি চেয়ে বলল শাসকদল তৃণমূল
    আনন্দবাজার | ২৭ জুন ২০২৫
  • কসবার ল কলেজে ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা করল তৃণমূল। ওই ঘটনায় শুক্রবার দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি তুলেছে তারা। সেই সঙ্গেই বিরোধীদের একহাত নিয়ে রাজ্যের শাসকদল জানিয়েছে, নারীর শরীর ‘রাজনীতি করার যুদ্ধক্ষেত্র’ নয়।

    রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার কটাক্ষ, বিরোধীরা নির্যাতিতার প্রতি সমব্যথী নন। তাঁরা আসলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে চলছেন। কসবার ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত তিন জনেরই তৃণমূল-যোগ প্রকাশ্যে এসেছে। এই নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরা। ঘটনায় অভিযুক্ত যে তৃণমূলেরই সদস্য, তা-ও মেনে নিল তৃণমূল। তাঁদের কঠোর শাস্তির দাবিও করেছে রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য জানান, অভিযুক্ত কোন দল করেন, তা এখানে প্রশ্ন নয়। দোষীর বিচার করতে হবে। এই নিয়ে বিরোধী বিজেপি এবং সিপিএমের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষও।

    শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের মন্ত্রী শশী পুলিশের সক্রিয়তার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি জানান, ধর্ষণের ঘটনা মানুষের গোচরে আসার আগেই পদক্ষেপ করেছে পুলিশ। তিন জনকেই গ্রেফতার করেছে। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার কসবা থানায় তরুণী লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যাতেই তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ তৃতীয় অভিযুক্ত ধরা পড়েন। এই ঘটনার কথা উল্লেখ করে শশী জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার ‘নির্যাতিতা’র পাশে রয়েছে।

    তার পরেই শশী অভিযোগ করেন যে, এই ঘটনায় রাজনীতি প্রবেশ করছে। ‘রাজনৈতিক ভাবে দেউলিয়া’ হয়ে যাওয়া দলগুলি বিভিন্ন ভাবে এর ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে তাঁর মত। শশীর কথায়, ‘‘মহিলার শরীর রাজনীতি করার যুদ্ধক্ষেত্র নয়। সম্মান করতে হবে।’’ বিজেপির দিকে আঙুল তুলে শশী প্রশ্ন তোলেন যে, এ রাজ্যের বিধানসভায় ১০ মাসে আগে অপরাজিতা বিল পাশ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন তা আইনে পরিণত হল না? তাঁর কথায়, ‘‘কে আটকে রেখেছে?’’ প্রসঙ্গত, বিধানসভায় অপরাজিতা বিল পাশ হওয়ার পরে তা রাষ্ট্রপতির সম্মতির জন্য পাঠানো হয়েছে। শশীর কটাক্ষ, এ রাজ্যের সরকার নারী নির্যাতনে দোষীদের শাস্তির জন্য বিল এনেছে। দোষীদের মালা পরিয়ে বরণ করেনি। এ প্রসঙ্গে তিনি গুজরাত ধর্ষণের প্রসঙ্গ তুলেছেন।

    গুজরাতে দাঙ্গার সময় হওয়া ধর্ষণে দোষীরা জামিন পাওয়ার পরে তাঁদের মালা পরিয়ে সম্বর্ধনা জানানোর অভিযোগ উঠেছিল। সেই ঘটনাই শুক্রবার মনে করিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে মহিলা কুস্তিগিরদের নির্যাতনের অভিযোগের কথাও মনে করিয়েছেন কুণাল। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েটির পাশে সকলে রয়েছি আমরা। অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোনার মেয়েরা যখন দিল্লির রাস্তায় বসেছিলেন, তখন অমিত শাহের পুলিশ তাঁদের মেরে তুলে দেয়। এঁরা বড় বড় কথা বলবেন?’’ এর পর তিনি সিপিএমের আমলে হওয়া তাপসী মালিকের নির্যাতন এবং খুনের ঘটনার প্রসঙ্গও তুলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন সেই শাসকের উত্তরসূরিরা বড় বড় কথা বলবেন!’’

    তৃণমূলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল সাংসদ মালা রায়ের সঙ্গেও অভিযুক্তের ছবি প্রকাশ্যে আসায়, তা নিয়ে শাসকদলকে বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধীরা। ছাত্রনেতা তৃণাঙ্কুর মেনে নিয়েছেন যে, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত তৃণমূলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে তাঁর দাবি, ওই ব্যক্তি ছাত্রপরিষদের সভাপতি কখনওই ছিলেন না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা জ্যোতিষবিদ্যা জানি না, যে ২০১৯ সালে বসে জেনে যাব ২০২৫ সালে সে এই ঘটনা ঘটাবে। আজ সে ধর্ষণ করেছে, সেটা দিয়েই বিচার করা উচিত। এখানে সে কোন দল করে, তা প্রশ্ন নয়। সে ধর্ষক, বিচার করতে হবে।’’

    একই সুর শোনা গিয়েছে কুণালের গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘নাম, পদবি বড় কথা নয়। ওই জানোয়ারের পিঠের চামড়া তুলে দেওয়া উচিত।’’ তৃণাঙ্কুর আবার পাল্টা প্রশ্ন করেন, রাজ্যপালের নামে যখন শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছিল, তখন বিজেপি কোথায় ছিল! কুণাল এই প্রসঙ্গেই জানান, ধর্ষণে অভিযুক্ত, প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ প্রজ্জ্বল রেভান্নাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে দেখা গিয়েছে। ব্রিজভূষণকেও দেখা গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রজ্জ্বল, ব্রিজভূষণের জন্য মোদীর দিকে আঙুল তুলতে হবে?’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)