নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দক্ষিণবঙ্গে সাফল্যের মুখ দেখায় এবার উত্তরেও বর্ষার পেঁয়াজ চাষ। পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হচ্ছে পাঁচ জেলায়। উদ্যানপালন দপ্তর সূত্রে খবর, মালদহ, দুই দিনাজপুর, আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি জেলায় চলতি বর্ষার মরশুম থেকেই এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড প্রজাতির পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উৎসাহী কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ দেবে রাজ্য। উদ্যানপালন আধিকারিকরা বলছেন, উত্তরবঙ্গে যেহেতু কম সময়ে বেশি বৃষ্টি হয়, সেকারণে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের ঝুঁকি রয়েছে। কারণ পেঁয়াজের জমিতে কোনওভাবে জল দাঁড়িয়ে গেলে গাছ মরে যাবে। মার খাবে ফলন। সেকারণে ঠিক হয়েছে, উত্তরবঙ্গে ভারী বর্ষা কেটে যাওয়ার পর অর্থাৎ আগস্ট থেকে উঁচু এবং ঢালু জমিতে পেঁয়াজের চারা লাগানো হবে। সেক্ষেত্রে ডিসেম্বরে ফলন মিলবে। আমাদের রাজ্যে শীতকালীন পেঁয়াজ বাজারে আসতে মার্চ-এপ্রিল হয়ে যায়। ফলে ডিসেম্বরেও যদি বর্ষার পেঁয়াজ বাজারে আসে, সেক্ষেত্রে ভালো দাম পাবেন চাষিরা। মূলত নাসিকের উপর নির্ভরতা কমাতেই দক্ষিণবঙ্গের পর এবার উত্তরেও বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দেওয়া হয়েছে।
জলপাইগুড়ির সহকারী উদ্যানপালন অধিকর্তা খুরশিদ আলম বলেন, এবছর থেকে উত্তরবঙ্গের পাঁচটি জেলায় বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রাজ্য বীজ উন্নয়ন নিগমের পক্ষ থেকে উৎসাহী চাষিদের বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ দেওয়া হবে। এক কেজি করে বীজ পাবেন চাষিরা। তা দিয়ে তাঁরা এক বিঘা জমিতে চাষ করতে পারবেন। উদ্যোগ সফল হলে আগামী বছর বেশি জমিতে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, জলপাইগুড়িতে ২০০ কেজি বর্ষাকালীন পেঁয়াজের বীজ দেওয়া হবে। মালদহে দেওয়া হবে ৩০০ কেজি বীজ। উত্তর দিনাজপুরে ১১০ কেজি, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৩০ কেজি এবং আলিপুরদুয়ারে ১০০ কেজি পেঁয়াজের বীজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। শীতকালে চাষ হওয়া ‘সুখসাগর’ প্রজাতির পেঁয়াজ যেমন বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না, এগ্রি ফাউন্ড ডার্ক রেড তা নয়। এই জাতের পেঁয়াজ তুলনামূলকভাবে বেশিদিন রাখা যায়। তাছাড়া এই জাতের পেঁয়াজ দেখতে গোল ও গাঢ় লাল রঙের হয়। ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। জাতটি উচ্চ ফলনশীল। হেক্টরে ৩০ টন পেঁয়াজ মেলে। ফলে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। উদ্যানপালন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের রাজ্যে শীতকালে যে পেঁয়াজ হয়, তা মূলত জুন মাস পর্যন্ত চলে। এরপরই নাসিক থেকে পেঁয়াজ ঢুকতে শুরু করে। ফলে দাম বাড়ে। কোনও কোনও বছর পেঁয়াজের দাম এতটাই বেড়ে যায় যে, মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যায়। রাজ্যে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষের এলাকা যত বাড়বে, ততই নাসিক থেকে পেঁয়াজের আমদানি কমবে। দামও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। সেকারণেই রাজ্য সরকার দক্ষিণবঙ্গের পর এবার উত্তরবঙ্গে বর্ষাকালীন পেঁয়াজ চাষে জোর দিচ্ছে।