• চিল্কিগড় রাজবাড়ির রথে একাই সওয়ার জগন্নাথদেব
    বর্তমান | ২৮ জুন ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: সাড়ে তিনশো বছরর প্রাচীন চিল্কিগড় রাজবাড়ির রথে সওয়ার হন জগন্নাথদেব একাই। রাজবাড়ির নবরত্ন কাঁলাচাদ মন্দিরে সুভদ্রার পাহারায় থাকেন বলরাম। গাছের পাতা, ফুল দিয়ে রথ সাজানো হয়। ভক্তদের দেওয়া হয় চিবিতং লড্ডুক। 

    রথযাত্রার সেই জৌলুস আর না থকলেও রাজবাড়ির সদস্যরা রীতি মেনে আজও রথের দড়ি ধরে যাত্রার সূচনা করেন। নবরথে জগন্নাথদেবের বিগ্ৰহ নিয়ে নগর পরিক্রমা করা হয়। নবরত্ন কালাচাঁদ মন্দিরে থেকে সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্ৰহ বের করা হয় না। রথযাত্রার এই প্রথা ও রীতি ঘিরে নানা জনশ্রুতি ছড়িয়ে আছে। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, অরণ্যসঙ্কুল এলাকায় জগন্নাথদেব সুভদ্রাকে নিয়ে বের হতে চাননি। পাহারায় রেখে এসেছিলেন দাদা বলরামকে। আবার অনেকের বিশ্বাস, সুভদ্রা রাগ করে মন্দির থেকে বের হতে চাননি। রাজ পরিবারের সদস্যদের অবশ্য বক্তব্য, এই প্রথা কেন শুরু হয়েছিল তা তাঁদের অজানা। রাজবাড়ির নথিপত্রেও এই প্রথার বিষয়ে কোনও উল্লেখ পাওয়া যায় না। শতাব্দী পর শতাব্দী ধরে এই প্রথা চলে আসছে। রথযাত্রার দিন সকাল থেকেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। প্রথা মেনে নিত্যদিনের পুজো হয়। মন্দিরে পঞ্চ গণেশ, লক্ষ্মী নারায়ণ ও ২৭টি শালগ্ৰামের পুজো হয়। ষোড়শ ভোগের আয়োজন করা হয়। ষোড়শ ভোগে খিচুড়ি, সাতরকম ভাজা ও পায়েস থাকে। দুপুরে জগন্নাথদেবের গা মুছে নববস্ত্র পরিধান করানো হয়। রাজ বেশে জগন্নাথদেবকে রথে বসানো হয়। তিনি একাই নগর পরিক্রমা করেন। বিকেলে রাজবাড়ির কালীমন্দিরে মাসির বাড়িতে আসেন। জগন্নাথ বিগ্ৰহকে আটদিন সেখানে রাখা হয়। নবম দিনে উল্টো রথে নগর পরিক্রমা করে জগন্নাথ বিগ্ৰহ নবরত্ন কালাচাঁদ মন্দিরে ফিরে আসে। মন্দিরের পুরোহিত অচিন্ত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ওড়িশার প্রথা ও রীতি মেনে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার পুজো হয়। জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রাও হয়েছে। সুভদ্রা ও বলরামের বিগ্ৰহ যেহেতু মন্দির থেকে বের হয় না, তাই তাদের অঙ্গরাগ হয় না। এবারও প্রতিবারের মতো ষোড়শ ভোগের আয়োজন করা হয়েছে। গুড়ের ময়ান করে চিঁড়ে দিয়ে লাড্ডু বানানো হয়েছে। যাকে চিবিতং লড্ডুক বলা হয়। ভক্তদের সেই প্রসাদ দেওয়া হবে। চিল্কিগড় রাজবাড়ির উত্তরপুরষ তেজসচন্দ্র ধবলদেও বলেন, সাড়ে তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে এই রথযাত্রা উৎসব হয়ে চলেছে। তিরিশ-চল্লিশ বছর আগেও ধুমধাম করে রথযাত্রা হতো। রথে শুধু জগন্নাথদেবের বিগ্ৰহ বের করা হয়। প্রাচীন এই প্রথার সূচনা কীভাবে হল তার কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। তবে নিয়ম মেনে রাজবাড়ি থেকে রথ বের করে নগর পরিক্রমা করা হয়। চিল্কিগড় রাজবাড়ির রথযাত্রার প্রচার খুব একটা নেই। তবে এলাকার মানুষজন উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে রথযাত্রা শামিল হন। চিল্কিগড়ের বাসিন্দা মানস জানা বলেন, ছোট থেকেই রথযাত্রায় শামিল হই। এবারও রথের দড়ি টানব। বিস্ময় লাগে এমন এক রথযাত্রার কথা বাইরের মানুষ বেশি জানেন না। 
  • Link to this news (বর্তমান)