• বাড়িতে ঢুকে ছাত্রীকে কুপিয়ে খুন, গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী প্রেমিকও
    বর্তমান | ২৮ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: প্রেমিক একজন খুনি, জেল খাটা আসামি— এ কথা জানতে পেরেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছিল নাবালিকা প্রেমিকা। অন্য একজনের সঙ্গে তার বিয়েও প্রায় ঠিক করে ফেলেছিল পরিবার। সেটা মেনে নিতে পারেনি প্রেমিক। প্রথমে নিজেদের অন্তরঙ্গ ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় সে। তাতেও লাভ হয়নি। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাতে রাস্তায় একা পেয়ে  থেকে প্রেমিকাকে তুলে নিয়ে যায় সে। তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে ওই নাবালিকাকে। আর নিজেও ঝুলে পড়ে গলায় গামছা বেঁধে। এমন মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থাকল তারাপীঠ। দু’টি দেহই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিস।পুলিস ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সুমিতা বায়েন নামে ওই নাবালিকা একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। বয়স ১৭ বছর। তারাপীঠের বাতিনা গ্রামে তার বাড়ি। বছর চারেক আগে স্কুলে যাওয়া আসার পথে খামেড্ডা গ্রামের বছর বাইশের যুবক বিক্রম মালের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। বিক্রম পেশায় তারাপীঠে একটি ফুলের দোকানের কর্মী। ধীরে ধীরে দু’জনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর খানেক আগে সুমিতা জানতে পারে, বিক্রম জেলখাটা আসামি। পাঁচ বছর আগে কাকাকে খুনের অভিযোগে তাকে জেলে যেতে হয়েছিল। বিষয়টি জানার পর ওই যুবকের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করতে থাকে সে। কিন্তু বিক্রম তা মেনে নেয়নি। উল্টে বিয়ে করার জন্য নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিল ছাত্রীটিকে। এর মধ্যেই মুর্শিদাবাদের এক যুবকের সঙ্গে সুমিতার বিয়ের ঠিক করেন বাবা-মা। আগামী ২১ আষাঢ় ছিল বিয়ের দিন। 

    প্রেমিকার বিয়ের কথা জানতে পেরে তাদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ভাইরাল করে দেয় বিক্রম। তখনই তাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে নাবালিকার পরিবার। তাঁরা থানার দ্বারস্থ হন। কিন্তু সামনেই মেয়ের বিয়ে, তাই পুলিসকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার আর্জি জানাননি। বরং দু’পক্ষ বসে মিটমাট করে নেয়। বিক্রমকে সর্তক করে ছেড়ে দেয় পুলিস। তারপরই এই ঘটনা।বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ আচমকা প্রেমিকার উপর চড়াও হয় বিক্রম। ঘটিয়ে ফেলে হাড়হিম করা কাণ্ড। সুমিতার মা পূর্ণিমা বলছিলেন, ‘পাশেই জেঠিমার বাড়িতে ছিল মেয়ে। সেখান থেকে বাড়ি ফিরছিল। রাস্তায় ওর মুখ চেপে ধরে একটি ঘরে নিয়ে যায় বিক্রম। সেখানে চাকু দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। মেয়ের আর্তচিৎকার শুনে দৌড়ে যাই। ছেলেটি পালিয়ে যায়। মেয়েকে উদ্ধার করে রামপুরহাট মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।’ রাতেই বিক্রমের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নাবালিকার পরিবার। পুলিস বাড়িতে যায়। সেখানে অভিযুক্তকে না পেয়ে তার বাবাকে থানায় নিয়ে আসে। শুক্রবার সকালে তারাপীঠের সাহাপুরে একটি কাঠমিলে বিক্রমকে গলায় গামছা জড়িয়ে ঝুলতে দেখেন স্থানীয়রা। পুলিস গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। বিক্রমের বাবা তপন মাল বলছিলেন, ‘বছর পাঁচেক আগে আমার দূর সম্পর্কের দাদাকে খুনের অভিযোগে ছেলে চারমাস জেল খেটেছিল। কিন্তু পুলিস তাকে সন্দেহবশত ধরেছিল। সেটা জানতে পেরে মেয়েটি ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছিল না। আমরাও ছেলেকে নিষেধ করি। কিন্তু ও যে মেয়েটিকে খুন করে নিজেকে এভাবে শেষ করবে, এতটা ভাবিনি।’  - নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)