• রাজ রাজেশ্বরী বেশে তারা মা বেরলেন রথে চেপে, তারাপীঠে ভক্তের ঢল
    বর্তমান | ২৮ জুন ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: শুক্রবার বিকেলে তারাপীঠে তারা মায়ের ব্যতিক্রমী রথযাত্রায় ব্যাপক ভক্ত সমাগম হল। বিভিন্ন রকমের বাদ্য আর ‘জয় তারা’ ধ্বনিতে মুখরিত হল গোটা তারাপীঠ। সকলেই মাকে দর্শন করে রথের দড়িতে টান দিয়ে নিজ নিজ মনস্কামনা জানালেন।  বহু বছর ধরেই তারাপীঠে মা তারার রথযাত্রা হয়ে আছে। বিকেল তিনটেয় চিঁড়ে, পাঁচ রকম মিষ্টি, ফল দিয়ে ভোগ নিবেদনের পরে হয় বিশেষ পুজো। রথ উপলক্ষ্যে দেবীকে জিলিপি ভোগ নিবেদন করা হয়। রথ বেরনোর আগে মাকে বেনারসি কাপড় পরানো হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে মা তারাকে অপরাজিতা, জবা, রজনীগন্ধা ফুলের বড় বড় মালা দিয়ে সাজানো হয়। তারপরে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে মাকে বের করে মন্দিরের মূল প্রবেশ দ্বারের নীচে অপেক্ষমান সুসজ্জিত রথে চাপানো হয়। সাধারণত জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে রথে বসিয়ে ভারতবর্ষে রথযাত্রা হয়। কিন্তু তারাপীঠে তারা মা-ই জগন্নাথের প্রতিভূরূপে রথে আরোহন করেন। একাধারে তিনি কালী, অন্যদিকে তিনিই কৃষ্ণ। সোজা রথ, উল্টো রথ দুই পর্যায়েই মা তারা রথে চড়েন। এদিন বিকেলে চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনে সেই রথ বের হয়। রথযাত্রার সূচনা করেন টিআরডিএর চেয়ারম্যান তথা বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। রথ বেরনোর অনেক আগেই বিদ্যুৎ দপ্তরের কর্মীরা রাস্তার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন। যাতে রথের চুড়ো বিদ্যুৎবাহী তারে ঠেকে বিপদ না ঘটে। এদিন দেবী তারার রথের দড়ি টানার জন্য ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। হরি সংকীর্তন, বিভিন্ন রকম বাজনা ও ‘জয় তারা’ ধ্বনি সহযোগে তারা মাকে রথে চাপিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করানো হয়। রথের দড়িতে টান দিতে এরাজ্য ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, বিহার সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যের মানুষ ভিড় জমান। যেহেতু এদিন  ছিল ছুটির দিন এবং পরের দু’ দিন শনি ও রবিবার, তাই অন্যান্য বছরের তুলনায় এদিন পর্যটকের ভিড় ছিল ব্যাপক।  তবে রথে অনেক পান্ডা, তাঁদের বাড়ির মহিলা সদস্য ও বাচ্চারা চেপে পড়ায় অনেককে দেবী দর্শনে বেগ পেতে হয়। যা নিয়ে মনক্ষুণ্ণ হন দূরদূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের। মালদহের রাজু দাস বলেন, ভালোভাবে মায়ের দর্শন পাওয়ায় আশায় আসা। কিন্তু এত হুড়েহুড়ি যে কাছে গিয়ে রথের দড়িতে টান দেব তার উপায় নেই। পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হতে পারে। দূর থেকে দর্শন করব তাও রথে মাকে ঘিরে রেখেছে পান্ডা ও তাঁদের পরিবারের লোকরা। কোনও সিস্টেম নেই। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, গোটা তারাপীঠ প্রদক্ষিণের পর মা-কে মন্দিরে ফিরিয়ে এনে বিশেষ পুজো, সন্ধ্যারতি ও শীতল ভোগ নিবেদন করা হয়। রাতে লুচি, সুজি ও পাঁচরকম ভাজা দিয়ে মাকে ভোগ দেওয়া হয়। আশিসবাবু বলেন, যতদিন দিন যাচ্ছে দেবী তারার রথের মাহাত্ম্য ততই প্রসিদ্ধি লাভ করছে। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)