আর্থিক সঙ্কট, সুপ্রিম কোর্টে মডিফিকেশন পিটিশন, ডিএ দিতে ছ’মাস সময় চাইল রাজ্য
বর্তমান | ২৮ জুন ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি ও কলকাতা: রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ’র ২৫ শতাংশ মেটানোর জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে অন্তত আরও ছ’মাস সময় চাইল নবান্ন। গত ১৬ মে শীর্ষ আদালতের জারি করা অন্তর্বর্তী নির্দেশে বলা হয়েছিল, ২৭ জুনের মধ্যে রাজ্য সরকারকে বকেয়া ডিএ’র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে হবে। পুরো বকেয়া মেটানোর জন্য নবান্নের খরচ হওয়ার কথা ৪১ হাজার ৮৭০ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা। আর এই ২৫ শতাংশ দিলে ১০ হাজার ৪২৫ কোটি। বিপুল অঙ্ক। কেন্দ্রের লাগাতার বঞ্চনার জেরে এমনিতেই আর্থিক বোঝা চেপে রয়েছে বাংলার কাঁধে। তাছাড়া রাজ্য চলতি অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) বকেয়া ডিএ মেটানোর জন্য কোনও বাজেট বরাদ্দ করেনি। তাই বকেয়া ডিএ কীভাবে দেওয়া হবে, সেই প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতেই অন্তত ছ’মাস সময় লেগে যাবে। ফলে বাধ্য হয়েই আরও কিছুটা সময় চেয়েছে রাজ্য। এই মর্মে শীর্ষ আদালতে মডিফিকেশন পিটিশনও দাখিল করা হয়েছে নবান্নের তরফে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কিন্তু জানিয়েছে, তারা বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দেবে। তাদের বক্তব্য, ২০০৮ সালের তুলনায় এখন রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ ১২৫ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে বছরে দু’বার ডিএ চাইছেন। রাজ্য সরকার ১১৯ পাতার আবেদনে জানিয়েছে, তারা বকেয়া ডিএ’র ২৫ শতাংশ সরাসরি আদালতের তহবিলে জমা দিতে প্রস্তুত। শুধু সময় প্রয়োজন। প্রাপ্য ১ লক্ষ ৮৭ হাজার ১৪২ কোটি টাকা এখনও দেয়নি কেন্দ্র। ১০০ দিনের কাজ তো বটেই, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা, গ্রাম সড়ক যোজনা, স্বাস্থ্য মিশন, স্বচ্ছ ভারত মিশনের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্প নিয়েও বঞ্চনা চলছে। অথচ এই সব প্রকল্পের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হচ্ছে নবান্নকেই। তার খরচও প্রচুর। কেন্দ্রীয় হারে ডিএ না পেলেও বাকি সুবিধা থেকে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বঞ্চিত করা হয় না। রাজ্যের নানাবিধ প্রকল্পের সুবিধাও পেয়ে থাকেন তাঁরা। এলটিসি এবং এইচটিসি খাতেই তিন বছরে সরকার ৮৬৪ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা খরচ করেছে। সরকারি স্বাস্থ্য প্রকল্পে কর্মচারীদের জন্য তিন বছরে খরচ হয়েছে ১ হাজার ৫৯০ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীদের পেনশন সহ অন্যান্য সুবিধা মেটাতেই রাজ্য ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ২৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা খরচ করেছে। এই পরিস্থিতিতে বকেয়া ডিএ দিতে হলে বাজার থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়াই একমাত্র পথ। সেক্ষেত্রে এফআরবিএম আইনের গাইডলাইন মানতে হবে। আর অতিরিক্ত ঋণ নিতে কেন্দ্রের অনুমতি প্রয়োজন। সবটাই সময়সাপেক্ষ।সুপ্রিম কোর্টে এখন অবকাশকালীন বেঞ্চ বসছে। এই আবেদন তাই এখনই গ্রাহ্য হবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে। এই মামলার আগামী শুনানি ৪ আগস্ট। এমনিতেই শুক্রবার বকেয়া ডিএ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় ডিএ মামলার মূল আবেদনকারী কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজের তরফে আইনজীবী গোপা বিশ্বাস মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ ও অর্থসচিব প্রভাত কুমার মিশ্রকে ই-মেলের মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ রাজ্য সরকার কার্যকর করেনি। এতে আদালত অবমাননা হয়েছে। নির্দেশটি অবিলম্বে কার্যকর করার দাবি জানানো হয়েছে চিঠিতে। কনফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্টের সময়সীমা শুক্রবারই শেষ হল। আগামী সোমবার তাঁরা নবান্নে গিয়ে রাজ্য সরকারকে লিখিত নোটিস দিয়ে আসবেন। আগামী মাসে সুপ্রিম কোর্ট খুললেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা করা হবে। কনফেডারেশনের বক্তব্য, বকেয়া ডিএ না পাওয়ায় সবথেকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছেন পেনশনভোগীরা। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের রাজ্য আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক জানিয়েছেন, ‘নবান্ন কিছুটা সময় চেয়েছে। কখনও বলেনি ডিএ দেব না।’