• ইলেকট্রিক বাস থেকে মুখ ফেরাচ্ছে রাজ্য, মেয়াদের আগেই বসে গিয়েছে ১৮ লাখি ব্যাটারি, আসছে সিএনজি
    বর্তমান | ২৮ জুন ২০২৫
  • রাজু চক্রবর্তী, কলকাতা: পরিবেশের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে বছর সাতেক আগে কলকাতায় প্রথম চালু হয়েছিল ইলেকট্রিক বাস। এই ক’দিনেই আধুনিক প্রযুক্তির এই বাস নিয়ে মোহভঙ্গ ঘটেছে সরকারের! তাই গণপরিবহণের ক্ষেত্রে ইলেকট্রিক বাস থেকে মুখ ফেরাচ্ছে নবান্ন। রাজ্য সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী দিনে নতুন করে আর কোনও ইলেকট্রিক বাস কেনা হবে না। বর্তমানে ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (ডব্লুবিটিসি) অধীনে সরকারি ডিপোগুলিতে ৮০টি ইলেকট্রিক বাস রয়েছে। বাসগুলি ৯ মিটার এবং ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের। দাম ৯৫ লক্ষ থেকে ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার মধ্যে। সূত্রের খবর, বাসগুলি কেনার সময় দেশের প্রথম সারির এক গাড়ি প্রস্তুতকারক সংস্থা দাবি করেছিল, এগুলি অনায়াসে ১২ বছর যাত্রী পরিষেবা দিতে পারবে। একবার ফুল চার্জ দিলে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার ছুটতে পারবে বাসগুলি। বাস্তবে কী দেখা যাচ্ছে? এই ক’দিনেই অধিকাংশ বাস বসে যেতে শুরু করেছে। কারণ, দুর্বল হয়ে পড়ছে ব্যাটারি। ফলে ‘মাইলেজ’ নেমে আসছে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটারে। আরও একটি সমস্যা হল, এসব বাসের রক্ষণাবেক্ষন সহ যন্ত্রাংশের দাম অত্যন্ত চড়া। হাতেগোনা কয়েকটি সংস্থা যন্ত্রাংশগুলি বাজারে সরবরাহ করে। একচেটিয়া কারবার চলে কার্যত। প্রতিটি বাসে তিনটি করে ব্যাটারি রয়েছে। এক-একটির দাম ১৮ লক্ষ টাকা। সম্প্রতি নবান্নে সরকারি গণপরিবহণ নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে ইলেকট্রিক বাসের এই ‘বাস্তবতা’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। রাজ্যের ভাঁড়ারে আর্থিক টানাটানির মধ্যে বিকল্প জ্বালানির এই বাস যেন বাড়তি বোঝা হয়ে উঠছিল সরকারের কাছে। এই প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়, আর কোনও ই-বাস কেনা হবে না। কিন্তু পরিবেশ দূষণের ইস্যুটিও গুরুতর। সেই কথা মাথায় রেখে সিএনজি (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) চালিত বাসের দিকে ঝুঁকছে রাজ্য। নবান্ন সূত্রে খবর, শুক্রবারই ২০০টি সিএনজি এসি বাস কেনার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে দপ্তর। সিএনজি জ্বালানিতে চলা এই বাসগুলি একই সঙ্গে পরিবেশবান্ধব এবং আর্থিক দিক থেকে সাশ্রয়ী হবে। এই ধরনের বাসের দাম ৪২ থেকে ৪৪ লক্ষ টাকার মধ্যে। বিনা ঝঞ্ঝাটে অন্তত ১৫ বছর রাস্তায় দাপিয়ে চলবে বাসগুলি। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আসন্ন দুর্গাপুজোর আগেই ৩০ থেকে ৪০টি সিএনজি এসি বাস নামবে শহরের রাস্তায়। যদিও এসব বাসের গ্যাসের জোগান দিতে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা এখনও হয়নি। একমাত্র কসবা ডিপোতে সিএনজি পাম্প রয়েছে। বছর দু’য়েক আগে টালিগঞ্জ, বারাসত ও হাওড়া ডিপোতে সিএনজি স্টেশন তৈরির কথা থাকলেও তা হয়নি এখনও। এদিকে, বৃহত্তর কলকাতায় ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য ১৪টি চার্জিং স্টেশন তৈরি করা হয়েছিল। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে ওই চার্জিং স্টেশনগুলির ভবিষ্যৎও প্রশ্নের মুখে পড়ল।
  • Link to this news (বর্তমান)