• CPIM-র পার্টি অফিসেই এখন মাছের আড়ত
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৫
  • এই সময়, মেদিনীপুর: একটা সময়ে গমগম করত পার্টি অফিস। দেওয়ালে জ্বল জ্বল করত মার্কস-লেনিনের ছবি। লাল ঝাণ্ডায় মোড়া থাকল অফিস ঘর। সে সব এখন অতীত। এখন আর সেই উন্মাদনাও নেই। নেই লোকজনের ভিড়ও।

    সেখানে যে কোনও কালে সিপিএমের পার্টি অফিস ছিল সেটা বোঝাই দুষ্কর। এখন সেখানে বসে মাছের বাজার। আবার কোথাও তৈরি হয়ে গিয়েছে মাছের আড়ত। শালবনির ভাদুতলা এলাকার সিপিএম পার্টি অফিসটি আশির দশকে তৈরি হয়েছিল।

    একসময় এ’টি ছিল ভাদুতলা লোকাল কমিটির প্রাণকেন্দ্র। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত মানুষের ভিড় লেগেই থাকত পার্টি অফিসে।

    কেউ আসতেন পারিবারিক সমস্যা নিয়ে, কেউ আসতেন জমি-সম্পত্তির সমস্যা নিয়ে, কেউ আসতেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ নিয়ে আবার কেউ আসতেন রাজনৈতিক কোনও কাজ নিয়ে। মিটিং–মিছিলের সময়ে কর্মী সমর্থকদের ভিড়ে গমগম করত পার্টি অফিস।

    ২০১১ সালের পর থেকে সংগঠন ভাঙতে ভাঙতে এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, এখন সেই সব পার্টি অফিসের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। এখন সেখানে মাছের আড়ত তৈরি হয়ে গিয়েছে। বড় বড় বোর্ডে লেখা ‘মাছের আড়ত’।

    শুধু ভাদুতলাই নয়, মেদিনীপুর শহরের কুইকোটা এলাকায় সিপিএমের বিশাল পার্টি অফিসের সামনে প্রতিদিন সকাল থেকে বসে মাছের দোকান। দরজায় তালা ঝুলছে। পার্টি অফিসের সামনের ফাঁকা জায়গা এখন মাছ বিক্রেতাদের দখলে।

    ভাঙা চেয়ার–টেবিলের পাশে সাজানো থাকে মাছের পসরা। শালবনির ভাদুতলায় সিপিএম অফিসের অবস্থা নিয়ে দলের জেলা কমিটির সদস্য এবং শালবনি এলাকার নেতা লক্ষ্মী মাহাতো বলেন, ‘পুরনো অফিসটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্যই ভাড়া দেওয়া হয়েছে স্থানীয় এক মাছ ব্যবসায়ীকে।

    পাশেই নতুন কার্যালয় রয়েছে। সেখান থেকেই চলছে দলের কাজ। এই অফিস থেকে যা ভাড়া আসে, তা এরিয়া কমিটির তহবিলে যুক্ত হচ্ছে।’

    অন্যদিকে সিপিএমের মেদিনীপুর শহর পূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক কুন্দন গোপ জানিয়েছেন, ‘কুইকোটা অফিসের সামনে মাছের দোকানে বসার ঘটনা দলের নজরে এসেছে। বিক্রেতাকে সরে যেতে বলা হয়েছে। আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অফিসটি ভাড়া বা বিক্রি কোনওটাই করা হয়নি।’

    এই ছবি শুধু শালবনি বা মেদিনীপুর শহরের নয়। জেলার একাধিক সিপিএম পার্টি অফিসের একই হাল। কোথাও দরজায় তালা ঝুলছে বছরের পর বছর, কোথাও দখল নিয়েছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।

    কর্মী অভাবে বহু অফিসে প্রতিদিন খোলাও সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় বাসিন্দা অসিত রায়, যিনি এক সময়ে সিপিএমের সক্রিয় কর্মী ছিলেন, বলেন, ‘সিপিএমের সংগঠন ২০১১ সালের পর থেকে ক্রমেই দুর্বল হয়েছে। এক সময়ে মানুষ এই পার্টি অফিসগুলিকে শেষ আশ্রয় মনে করত। আজ সেই পার্টি অফিসে মাছের আড়ত গড়ে উঠছে, এটা সত্যিই কষ্টের।’

    রাজ্যের অন্যত্রও ছবিটা অনেকটা একই রকম। এক সময় যে পার্টি অফিসগুলো ছিল শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের কেন্দ্র, সেগুলির অধিকাংশই এখন বন্ধ, কোথাও আবার দখল হয়ে গিয়েছে।

    আর এই ছবিই যেন স্পষ্ট করে দিচ্ছে রাজ্যের সিপিএমের বর্তমান অবস্থান। সিপিএম নেতৃত্ব যদিও বলছেন সংগঠন মজবুত করতে তাঁরা সাধারণ মানুষের জন্য তৃণমূল-শাসন বিরোধী আন্দোলনে থেকে সরছেন না। লড়াইয়ের ময়দানেই থাকবেন।

  • Link to this news (এই সময়)