আদালতের নির্দেশে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যপদ হারালেন তৃণমূল প্রার্থী। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর-২ ব্লকের এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কালিয়াড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে পঞ্চায়েত সমিতির ৪ নম্বর আসনে প্রার্থী হয়েছিলেন মানোয়ার আলি। তিনি জয়ীও হন। পঞ্চায়েত সমিতি গঠনের সময় তাঁকে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষও করে তৃণমূল। তাঁরই পদ বাতিল করে দিয়েছে আদালত।
জানা গিয়েছে, ওই আসনেই মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন কালিয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতেরই বাসিন্দা সুশান্ত পাল (বাচ্চু)। তৃণমূল তাঁকে দলীয় প্রতীক দেয়নি। তখনই তিনি মানোয়ারের মনোনয়নকে চ্যালেঞ্জ করে ব্লকের রিটার্নিং অফিসারের কাছে যান। কোনও লাভ না হওয়ায় মেদিনীপুর জেলা আদালতের দ্বারস্থ হন সুশান্ত।
মানোয়ারের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করে সুশান্ত অভিযোগ করেন, পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পঞ্চায়েত সমিতিতে ঠিকাদারি করলে সেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে না। মানোয়ার আলি ঠিকাদারি করা সত্ত্বেও কিভাবে মনোনয়ন পেল? সমস্ত নথি দিয়ে মামলা শুরু করেছিলেন মেদিনীপুর জেলা আদালতের সিভিল কোর্টে। বৃহস্পতিবার ওই আসনের নির্বাচনটিকেই বাতিলের নির্দেশ দেন মেদিনীপুরের সিভিল জজ (সেকেন্ড কোর্ট) অর্পিতা হাজরা।
সুশান্ত পালের আইনজীবী কুশল মিশ্র বলেন, ‘পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী মানোয়ার আলি মনোনয়ন দাখিলের জন্য উপযুক্ত না হয়েও মিথ্যে তথ্য দিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। অথচ, বিভিন্ন নথিতে ফলে খড়গপুর-২ ব্লকের অধীনে কালিয়াড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির আসনের নির্বাচন বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।’ তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফলেই বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়।
সুশান্ত পালের দাবি, তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি তৃণমূলে রয়েছেন। কংগ্রেস করার জন্য তাঁর বাবাকে খুনও হতে হয়েছিল। সে সময় যুব কংগ্রেস সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে। ২০১৩ সালের নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতি থেকে তিনি জয়ী হয়েছিলেন ওখানেই। যদিও পরবর্তীকতালে দল তাঁকে আর টিকিট দেয়নি। তা সত্ত্বেও তিনি মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন ২০১৮ এবং ২০২৩ সালে। ২০২৩ সালেও যখন তাঁকে টিকিট না দিয়ে মানোয়ার আলিকে দল টিকিট দেয় তখন আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি।
সুশান্তর দাবি, ‘আমার লড়াই দলের বিরুদ্ধে নয়। আমি আদালতের নির্দেশের বিষয়টিও দলনেত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাব। নসিব কন্সট্রাকশন নামে এক সংস্থার প্রোপাইটার মানোয়ার আলি। কাজের বরাত পেয়েছেন, টাকাও পেয়েছেন। তবু কিভাবে তিনি প্রার্থী হলেন? ’ তৃণমূলের খড়্গপুর-২ নং ব্লকের সভাপতি তৃষিত মাইতি বলেন, "শুনেছি আদালতের রায়ে পদ গিয়েছে। আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে প্রশাসন।’