সুমন ঘোষ, খড়্গপুর
বর্ষায় ঝর্নার রূপ দেখার মতো। রয়েছে সুবিশাল জলাধার। একটু দূরেই দেখা মিলবে জঙ্গলের। প্রাকৃতির সৌন্দর্যের টানে শীতকালে বহু মানুষ পিকনিক করতে যান। কিন্তু ভ্রমণ পিপাসু মানুষের কাছে এতদিন ভেটিয়া বাঁধটি থেকে গিয়েছিল চোখের আড়ালে।
এ বার সেখানে যোগা ট্যুরিজ়ম প্রকল্প রূপায়নের সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। ধাপে ধাপে এলাকাটিকে সাজিয়ে তুলে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে দিতে উদ্যোগ নেওয়া হলো। এলাকাটিকে সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি থাকবে শরীর চর্চার জন্য যোগাও। পর্যটকরা এসে যোগা পার্কে শরীর চর্চাও করতে পারবেন।
এই জায়গাটি ‘ভেটিয়া বাঁধ’ নামে পরিচিত। বর্ষায় যেহেতু সুন্দর ঝর্না ধারা ঝরে তাই অনেকে এটিকে আদর করে বর্ষাসুন্দরী ভেটিয়া বাঁধও বলে। যেটি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুর-১ ব্লকের ভেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত।
খড়্গপুর থেকে কেশিয়াড়ি যাওয়ার রাস্তায় ডিমৌলি থেকে বাঁ দিকে কিলোমিটার তিনেক গেলেই মিলবে এই বাঁধ। সেটিকেই এ বার ভেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ‘বর্ষাসুন্দরী ভেটিয়া বাঁধ যোগা ট্যুরিজম’ প্রকল্পের আওতায় আনছে প্রশাসন।
গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব সৌমিত্র রায় জানান, এলাকাটি এমনিতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। রয়েছে ঝর্না। প্রায় ১২ একর জুড়ে জলাধার। পাশে জঙ্গল। আবার একটি ছোট্ট খালও রয়েছে। যে সৌন্দর্য দেখলেই মানুষের মন ভরবে।
তাই পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করতে একাধিক পরিকাঠামো তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে যা বাস্তবায়িত করা হবে। যার প্রথম হলো, কমিউনিটি টয়লেট। পানীয় জলের নলকূপ। নিশ্চিন্তে কিছুক্ষণ বসার জন্য ছোট্ট একটি পার্ক।
ইতিমধ্যে এই তিনটি খাতে অর্থও মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। এগুলি সম্পন্ন হলেই প্রায় ২০০ মিটার পাকা রাস্তা তৈরি, খালের উপরে সেতু তৈরিও করা হবে। থাকবে যোগা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর তৈরি হাতের কাজ বিপণনের জন্য মার্কেট কমপ্লেক্স।
ট্র্যাডিশনাল চিকিৎসার জন্য তৈরি করা হবে আয়ুস্মান ভারত আরোগ্য মন্দিরও। কিছুটা জমিতে লাগানো হবে ওষধি গাছ। পাশাপাশি স্থানীয় মানুষকে জৈব চাষে প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। যে ফসলও বিক্রি হবে ওখান থেকেই।
এ ছাড়াও পিকনিক স্পট, জলাধারে বোটিং থেকে থাকার জন্য ঘর—পর্যটকদের বিনোদন এবং রাত্রিবাসের জন্য সব ধরনের পরিকল্পনাই রয়েছে। মূলত, নারী-শিশু উন্নয়ন ও সমাজ কল্যাণ— এই থিমের উপর তৈরি হবে যোগা ট্যুরিজ়ম প্রকল্প।
পঞ্চায়েত প্রধান শিল্পী মাহাতো এবং পঞ্চায়েতের সচিব সৌমিত্র রায় বলেন, ‘প্রকল্পটি বিভিন্ন ধাপে রূপায়ণ করা হবে। কাজ সম্পূর্ণ হলে ভেটিয়া বাঁধটি শুধু জেলার মানুষ নন, সারা রাজ্যের পর্যটকেরই আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু হবে বলে আমাদের আশা। পর্যটকদের আনাগোনা বাড়লে গ্রামীণ এলাকাটির অর্থনীতিরও উন্নতি ঘটবে দ্রুত গতিতে।’
বিনোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায়। তবে এই ধরনের যোগা ট্যুরিজম প্রকল্প এই জেলায় প্রথম বলে দাবি প্রশাসনের।
তাই এই প্রকল্পে যাতে কেন্দ্রীয় প্রকল্প রাষ্ট্রীয় গ্রাম স্বরাজ অভিযান থেকেও অর্থ মেলে সে জন্যও চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। খড়্গপুর-১ ব্লকের বিডিও সৌমেন দাস বলেন, ‘ভেটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগটি সত্যিই প্রশংসনীয়। প্রকল্প রূপায়ণে আমরাও ওদের সব রকম সাহায্য করব।’