• কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ল বাড়ি, মৃত ২
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৫
  • এই সময়, পাঁশকুড়া: পুরোনো দোতলা মাটির বাড়ি। তা ঠিক করবেন বলে মিস্ত্রি ডেকেছিলেন বাড়ির মালকিন। শুক্রবার মিস্ত্রি এসে বাড়িটি দেখে যান। আজ শনিবার থেকে কাজ শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু শুক্রবার বিকেলেই ভেঙে পড়ে ওই দোতলা বাড়ি।

    এই ঘটনায় বাড়ির মালকিন-সহ দু’জনের মৃত্যু হয়। কয়েক দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। সে জন্যই বাড়িটি ভেঙে পড়ে বলে দাবি পাঁশকুড়ার বাসিন্দাদের। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতারা হলেন পুষ্পরানি মাজি (৯১) এবং সুষমা গোস্বামী (৬৫)।

    দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন একজন। ভেঙে পড়ার বাড়ির দেওয়াল সরিয়ে মৃতদের উদ্ধার করতে আসে দমকল। আনা হয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদেরও। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার হয় দু’জনের দেহ। এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।

    পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি এলাকার পূর্ব শুকুতিয়া গ্রামের মাটির দোতলা বাড়িতে থাকেন পুষ্পরানি। পুষ্পের সঙ্গে বাড়িতে থাকতেন তাঁর বৌমা মমতা মাজি। পুষ্পরানির স্বামী এবং ছেলে আগেই মারা গিয়েছেন।

    প্রায় তিরিশ বছর ধরে পুষ্পর বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন স্থানীয় খসরবন গ্রামের সুষমা। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, পরিবারটি আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হলেও তাঁরা পাকাবাড়ি তৈরি করেননি।

    বাড়িটি বহুদিন আগে ভগ্নপ্রায় হয়ে পড়লেও তার মধ্যেই থাকতেন পুষ্প এবং মমতা। জানা গিয়েছে, শুক্রবার বাড়িটির একাংশ বসে যায়। মেরামত করার জন্য একজন মিস্ত্রিকে ডেকে আনেন পুষ্প। মিস্ত্রি পরের দিন বাড়িটি মেরামত করবেন বলেন।

    এরপরেই বিকেল সাড়ে ৩টে নাগাদ হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাড়ি। সেই সময়ে ঘরের মধ্যে ছিলেন পুষ্প। বাড়ির বারন্দায় কাজ করছিলেন সুষমা। তাঁরা দু’জনেই দেওয়াল চাপা পড়ে যান। বাড়ির পাশে কাজ করছিলেন পুষ্পর বৌমা মমতা। তাঁর মাথার উপরে দেওয়ালের একাংশ ভেঙে পড়লেও তিনি প্রাণে বেঁচে যান।

    বাড়ি ভেঙে পড়ার খবর পেয়ে ছুটে আসে দমকল। পাঁশকুড়া ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরাও যান এলাকায়। পাঁশকুড়া থানার পুলিশ ও দমকল উদ্ধার কাজে হাত লাগায়। উদ্ধারকাজে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে স্থানীয় কয়েকটি ক্লাবও।

    উদ্ধার কাজের জন্য একটি বুলডোজ়ার মেশিন আনা হয়। মেশিন দিয়ে মাটির দেওয়াল সরিয়ে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় সুষমাকে। দুর্ঘটনার সময়ে পুষ্প ঘরের মধ্যে ছিলেন। তাই তাঁকে উদ্ধার করতে বেগ পেতে হয় উদ্ধারকারীদের। প্রায় চার ঘণ্টা পরে উদ্ধার হয় পুষ্পরানির দেহ।

    মৃত সুষমার ছেলে গণেশ বলেন, ‘আমার মা মাজি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন। আজ বিকেলে বাড়িটি ভেঙে গিয়ে আমার মারা গিয়েছেন। বাড়িটি অনেক পুরোনো ছিল। সম্ভবত সে কারণেই ভেঙে গিয়েছে।’

    পুষ্পরানির প্রতিবেশী অতিশ মাজি বলেন, ‘পুষ্পরানি আমার জেঠিমা ছিলেন। জেঠিমা আর তাঁর বৌমা মাটির বাড়িতে থাকতেন। বাড়িটি আজ ভেঙে পড়ে।’

    পাঁশকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি সুজিতকুমার রায় বলেন, ‘খুব মর্মান্তিক ঘটনা। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লক প্রশাসন, দমকল এবং পুলিশ উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দু’জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে। বরাত জোরে একজন প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। প্রশাসন পরিবারটির পাশে রয়েছে।’

  • Link to this news (এই সময়)