এই সময়: দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজ ক্যাম্পাসে গণধর্ষণের ঘটনা সামনে আসতেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক দড়ি টানাটানি। বিরোধীরা যখন এই ঘটনার জন্য রাজ্যের শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলছে, তখন জোড়াফুল শিবিরও টেনে আনতে শুরু করেছে বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনাগুলি।
রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির তরফে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, আইন কলেজের ঘটনা তারা কিছুতেই হাতছাড়া করবে না। ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা মনোজিৎ মিশ্রর সঙ্গে তৃণমূলের একাধিক শীর্ষ নেতা–নেত্রীর ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিজেপি এই ধর্ষণকে ‘রাজনৈতিক ধর্ষণ’ হিসেবে প্রজেক্ট করতে শুরু করেছে শুক্রবার সকাল থেকেই।
দেরি না করে পথে নেমে পড়েছে বামেরাও। তারাও বিঁধছে রাজ্যের শাসককে। এ দিন দুপুরে সিপিমের ছাত্র ও যুব সংগঠনের তরফে বিক্ষোভ দেখানো হয় কসবা থানার বাইরে। সন্ধ্যায় সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে জড়ো হয় বিজেপির যুব মোর্চা।
দুই বিরোধী শিবিরের সঙ্গেই থানার বাইরে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। বিরোধীদের এ হেন তৎপরতাকে কটাক্ষ করে জোড়াফুল শিবির বলছে, দোষীদের চরমতম শাস্তি হোক। কিন্তু ধর্ষণের প্রতিবাদ করার নৈতিক অধিকার বিজেপির মতো দলের অন্তত নেই।
তার ব্যাখ্যাও শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে দিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজার দাবি, দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের ধর্ষিতা ছাত্রীর অভিযোগ পাওয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতা পুলিশ।
সে ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হয়নি। অথচ বিজেপি শাসিত গুজরাটে ঠিক উল্টো ছবি-ই দেখা গিয়েছে বলে সাংবাদিক বৈঠকে শশীরা উল্লেখ করেছেন। সেখানে ১১ জন দোষী সাব্যস্ত হওয়া ধর্ষককে গুজরাট সরকার মুক্তি পেতে সাহায্য করেছিল বলে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ।
মুক্তি পাওয়ার পরে গলায় মালা পরে হাসি মুখে বসে থাকা ওই ধর্ষকদের ছবিও শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে বিজেপিকে নিশানা করেছে রাজ্যের শাসক দল। শুধু তাই নয়, আইআইটি এবং বিএইচইউ ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে একাধিক শীর্ষ বিজেপি নেতার ছবিও এ দিন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছে তৃণমূল।
আরজি করের ঘটনার পরে ধর্ষকদের কঠোর এবং দ্রুত শাস্তি দিতে বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল’ এনেছিল রাজ্য সরকার। সেই বিল পাশ হওয়ার পরেও কেন আটকে আছে, সেই প্রশ্ন উত্থাপন করেও এ দিন বিজেপিকে বিঁধেছেন শশী–সহ একাধিক তৃণমূল নেতা-নেত্রী।
শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতা আইন কলেজের ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কলকাতা পুলিশের তাবড় অফিসাররা দিঘায় গিয়ে বসে রয়েছেন। আর কলকাতায় তৃণমূলের ছাত্র নেতারা ধর্ষণ করে বেড়াচ্ছে। আমরা ইস্যুটা ছাড়ছি না। খুব বড় আন্দোলন হবে। বাংলায় মহিলারা সুরক্ষিত নন।’
রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যর কথায়, ‘পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল-ই পুলিশ, এবং পুলিশ-ই তৃণমূল। তাই কলেজের মধ্যেই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করছেন তৃণমূল নেতারা। কারও মনে কোনও ভয় নেই।’
রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুদারের তোপ, ‘আরজি করের ঘটনার পরেও অভিযুক্তদের সঙ্গে আমরা তৃণমূলের যোগসূত্র দেখেছিলাম, এ ক্ষেত্রেও দেখছি। এটাই হয়তো রাজ্য সরকারের অনুপ্রেরণা।’
গোটা ঘটনায় তৃণমূল যে বিড়ম্বনায় তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মনোজিতের সঙ্গে তৃণমূলের বহু প্রথমসারির নেতা–-নেত্রীর ছবি ভাসছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যার ব্যাখ্যা দিতে এ দিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তৃণমূলের তরফে বার্তা দেওয়া হয়, মনোজিৎ এক সময়ে দলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাই তাঁর সঙ্গে দলের অনেকের ছবি থাকতেই পারে।
কিন্তু তার জন্য সে ধর্ষণ করে পার পেয়ে যায়নি, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমরা একবারও অস্বীকার করিনি যে অভিযুক্ত ছেলেটি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করতো না। সে ২০১৯ সালে সাংগঠনিক কমিটিতে ছিল।
আমরা জ্যোতিষ জানি না। তাই বুঝতে পারিনি সে ২০২৫ সালে এ রকম একটা অপরাধ করবে। আমাদের অনেকের সঙ্গেই অভিযুক্তের ছবি আছে। এখনও তো আমরা বলছি, ছেলেটি তৃণমূল করত কোনও এক সময়ে।’
দক্ষিণ কলকাতার তৃণমূল নেতা দেবাশিস কুমারও বলেন, ‘অনেকের সঙ্গেই অভিযুক্তর ছবি আছে। এ রকম ছবি থাকতেই পারে।’