• লেপার্ড রুখে ‘টাইসন’ এখন বনবস্তির হিরো!
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৫
  • অর্ঘ্য বিশ্বাস, লাটাগুড়ি

    নাম তার টাইসন। দেশি কুকুর।

    স্বভাবে মিষ্টি, বছর সাড়ে তিনের চেহারাটাও বাহুবলীর মতো নয়। তবু সামনে লেপার্ড দেখলে কী ভাবে যে তার মধ্যে মাইক টাইসন ভর করে...!

    জলপাইগু লাটাগুড়ি ও গোরুমারা জঙ্গল সংলগ্ন গোরুমারা সাউথ রেঞ্জ অফিসের কাছে রয়েছে বিছাভাঙা বনবস্তি। পঁয়তাল্লিশটির মতো পরিবারের বাস সেখানে। সন্ধ্যার পরে বস্তিতে হাতি ঢুকে পড়া নিত্যদিনের বিষয়।

    যদিও হাতির হানায় খুব একটা ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ নেই। তবে গত দেড় মাস ধরে বড়সড় চেহারার এক লেপার্ডের আনাগোনায় ঘুম উড়েছে বনবস্তির। সন্ধের দিকে গোরুমারা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে প্রায়শই বনবস্তি এলাকায় ঢুকে পড়ছে লেপার্ড।

    আর তার শিকারের তালিকার উপর দিকেই রয়েছে এলাকার কুকুর। গত দু’মাসে ওই এলাকার ছাগল-মুরগির পাশাপাশি অন্তত ১২টা কুকুর মেরে নিয়ে গিয়েছে লেপার্ডটি।

    আর এমন পরিস্থিতিতেই রুখে দাঁড়াচ্ছে টাইসন! বনবস্তির বাসিন্দা চন্দ্রমা কোরার প্রিয় পোষ্য সে। কিছুদিন আগে চন্দ্রমার বাড়ির উঠোন থেকে একটি কুকুরছানাকে তুলে নিয়ে যায় লেপার্ড।

    আশপাশে দু’তিনটি কুকুর থাকলেও তারা লেপার্ডটিকে রোখার সাহস দেখায়নি। ব্যতিক্রম টাইসন। সে নিজের চেহারার থেকে বেশ খানিকটা বড় ওই লেপার্ডের সঙ্গে রীতিমতো ধস্তাধস্তি শুরু করে। লেপার্ডের নখের আঁচড়ে টাইসনের মাথার দিকে একটি অংশ কেটেও যায়। শেষে কুকুরছানাটিকে মুখে তুলে পাশের চা বাগানের ভেতরে পালায় ওই লেপার্ড।

    সেদিনের ঘটনার পরেও একাধিকবার বনবস্তিতে এসেছে লেপার্ডটি। কিন্তু বেশিরভাগ সময়েই টাইসনের হাঁকডাকে সে শিকার না-করে ফিরে গিয়েছে। টাইসনকে আক্রমণ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে লেপার্ড।

    চন্দ্রমার কথায়, ‘বীরপাড়া থেকে শাবক অবস্থায় ওকে নিয়ে এসেছিলাম বছর দিনেক আগে। ভালোবেসে নাম রেখেছিলাম টাইসন। এখন ওর বয়স সাড়ে তিন বছর। নিজের প্রাণের পরোয়া না-করে বেশ কয়েকবার ও লেপার্ডের মুখোমুখি হয়েছে।

    কিন্তু ওই লেপার্ডের হামলায় এলাকার কুকুর কমে ৬-৭টিতে দাঁড়িয়েছে। টাইসনকে সব সময়ে আগলে রাখি। ও দেশি কুকুর। যতই সাহস থাক, বার বার কি লেপার্ডের সঙ্গে লড়তে পারবে? তাই ভয় হয়।’

    স্থানীয় বিছাভাঙা বনবস্তির বাসিন্দা ধীরেন কোরা বলছেন, ‘এলাকার ১২-১৫টি কুকুর ইতিমধ্যে লেপার্ডের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। বুধবার রাতেও লেপার্ডটি বস্তির একটি বাড়ির বারান্দা থেকে কুকুর তুলে নিয়ে যায়। সেটা এলাকার একটি রিসর্টের সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরাও পড়েছে।’

    ধীরেন জানান, জংলি জানোয়ার এলাকায় ঢুকে পড়লে কুকুর আগেভাগে তা টের পায়। সেই কারণেই বনবস্তির ঘরগুলিতে কুকুর পোষার রেওয়াজ রয়েছে। গোরুমারা সাউথের যৌথ বন পরিচালন কমিটির সভাপতি সুবল পাইকের কথায়, ‘এলাকার প্রায় সব কুকুরই লেপার্ডের আক্রমণে মরছে।

    হাতেগোনা কয়েকটি বেঁচে, তাদের মধ্যে টাইসন বেশ কয়েকবার সাহস দেখিয়েছে। লেপার্ডটিকে ধরতে এলাকায় খাঁচা বসাতে বন দপ্তরে অনুরোধ করা হবে।’ গোরুমারা সাউথের রেঞ্জার ধ্রুবজ্যোতি বিশ্বাস জানান, বিষয়টি দেখা হচ্ছে।

  • Link to this news (এই সময়)