• গঙ্গা জলচুক্তি: মমতার সঙ্গে আলোচনা করবে কেন্দ্র সরকার
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২৮ জুন ২০২৫
  • পাকিস্তানের সঙ্গে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত রেখেছে ভারত। সেই আবহে গঙ্গা জলচুক্তি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কথা বলার আগে কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে হবে রাজ্যগুলিকে। এই মন্তব্য করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা রণধীর জয়সওয়ালের। দিল্লিতে সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠক থেকে এমনটাই মন্তব্য করেন তিনি।

    বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জলচুক্তির বিষয়টি অনেকটাই গুরুত্ব সহকারে দেখছে ভারত। গঙ্গার জলবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার তিন দশক পরে আগামী ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সাংবাদিক বৈঠকে গঙ্গা জলচুক্তি সম্পর্কিত প্রশ্ন আসলে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী হবে তা ঠিক করার আগে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে এবং আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ পরামর্শে প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকি। অনুকূল পরিবেশে দুই পক্ষের জন্য লাভজনক সকল বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করতে আমরা প্রস্তুত।’

    এই মন্তব্যের দ্বারা জয়সওয়াল নাম না করেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যসরকার বলতে যে তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বুঝিয়েছেন, তা বলার বাকি থাকে না। এর আগে মমতা বন্দোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন যে, গঙ্গা জল বন্টন নিয়ে কেন্দ্র রাজ্যকে বঞ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে কোনো পরামর্শও করা হয়নি তাঁর সঙ্গে। তিনি দাবি করেন যে এরপরে নতুন করে যখন জলচুক্তি করা হবে তখন পশ্চিমবঙ্গকে বেশি জল দিতে হবে। এই মর্মে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও চিঠি দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই চিঠিতে গঙ্গা-পদ্মার গতিপথ সহ একাধিক ভৌগোলিক পরিবর্তনের কথা উল্লেখ ছিল। পদ্মা নদীর থেকে জলঙ্গী এবং মাথাভাঙ্গা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এর ফলে সুন্দরবন এলাকায় জলসংকট তৈরি হচ্ছে। অন্যদিকে ফারাক্কা ব্যারাজের ফলে ভাগীরথীর জল কমায় কলকাতার নাব্যতা তলানিতে পৌঁছেছে। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী কড়া ভাষায় জানিয়েছেন, গঙ্গা-তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেন বাংলাকে আড়ালে রেখে না করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী এই দাবিকে বিবেচনা করেছে কেন্দ্র। তারপরই এমন মন্তব্য জয়সওয়ালের।

    জয়সওয়াল আরও বলেন, ‘ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ই ৫৪টি নদী ভাগ করে নেয়, যার মধ্যে গঙ্গাও রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সমস্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক প্রক্রিয়া রয়েছে, যা হল যৌথ নদী কমিশন।’

    ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়ার স্বাক্ষরিত গঙ্গা জলবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে পরের বছরে। পূর্ব নির্ধারিত চুক্তি মেনেই জলবণ্টন হবে কিনা তা নির্ভর করছে নতুন এই চুক্তির উপর। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে জলের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে গঙ্গা জলচুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। তবে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ ছাড়ার পর ভারতের সঙ্গে ওপার বাংলার সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে , এই সময়ে দাঁড়িয়ে জলচুক্তি নিয়ে দিল্লি কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বাংলাদেশে হিন্দু মন্দির ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গেও বাংলদেশ সরকারের নিন্দা করেছেন জয়সওয়াল। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে যা সেই দেশের সরকারের জন্য অত্যন্ত নিন্দনীয়।
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)