শুক্রবারই শেষ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সময়সীমা। আর এ দিনই মহার্ঘ ভাতা নিয়ে শীর্ষ আদালতের কাছে আরও ছয় মাস সময় চেয়েছে রাজ্য সরকার। ১৬ মে ডিএ সংক্রান্ত মামলায় সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত যে পরিমাণ ডিএ রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া রয়েছে, তার ২৫ শতাংশ ৬ সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ ২৭ জুন শুক্রবারের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে। তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার দিনই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে সরকার জানিয়েছে, বর্তমানে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তাই বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর জন্য তাদের আরও সময়ের প্রয়োজন। পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানিয়েছে রাজ্য।
শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে এখনই বকেয়া দিতে পারছে না রাজ্য। এর অনেকগুলি কারণ রাজ্যের তরফে জানানো হয়েছে। সরকারের দাবি, বকেয় ডিএ–র ২৫ শতাংশ মেটাতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন রয়েছে। ২০২৫–২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে এর জন্য বরাদ্দ হয়নি। এই অর্থ দিতে গেলে রাজ্যকে ঋণ নিতে হবে। তার জন্য কেন্দ্রের অনুমোদনের প্রয়োজন রয়েছে। এই প্রক্রিয়া বেশ সময়সাপেক্ষ। তাই আরও সময় চাই রাজ্যের। পাশাপাশি রাজ্য জানিয়েছে, মহার্ঘ ভাতা বাধ্যতামূলক নয়। এটি কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতেও বাধ্য নয়। রাজ্য সরকারের নিজস্ব নিয়মাবলি আরওপিএ ২০০৯ অনুযায়ী, কত শতাংশ হারে কর্মীদের ডিএ বৃদ্ধি পাবে তা রাজ্যই নির্ধারণ করে। কেন্দ্রের ডিএ–র হারের সঙ্গে রাজ্যের সম্পর্ক নেই। কারণ কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো এক নয়। কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প যেমন ১০০ দিনের কাজ, আবাস যোজনা ইত্যাদিতে অনুদান কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে আর্থিক চাপে পড়ছে রাজ্য। জিএসটি বাবদ বকেয়াও রাজ্যকে এখনও মেটায়নি কেন্দ্র। এই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু সরকারি কর্মচারী নয়, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন, স্কুল, কলেজের কর্মীদেরও ডিএ দেয় রাজ্য। তাই সবাইকে কেন্দ্রের হারে ডিএ দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। এছাড়াও সরকারের দাবি, এ রাজ্য কর্মীদের পেনশনের পাশাপাশি স্বাস্থ্যপ্রকল্প, এলিটিসিও রয়েছে। এই সব পরিষেবা অন্যান্য রাজ্যে নেই।
ডিএ মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী, শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের মিলিয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি ডিএ বকেয়া আছে। রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আদালতে জানিয়েছিলেন, সম্পূর্ণ ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে। এরপর সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেয়, আপাতত বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ দিতে হবে রাজ্য সরকারকে। শুক্রবারের মধ্যে রাজ্যকে প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা মেটাতে বলা হয়েছিল। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫ শতাংশ হাতে ডিএ পান। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে পান ১৮ শতাংশ হারে ডিএ। মহার্ঘ ভাতা সংক্রান্ত মামলায় গত ১৬ মে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয়, ৬ সপ্তাহের মধ্যে বকেয়া ডিএ–র ২৫ শতাংশ দিতে হবে। সময়সীমা শেষ হওয়ার দিন অর্থাৎ শুক্রবারই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে আরও ৬ মাস সময় চাইল রাজ্য।