ইউনিয়ন রুমের বাইরে কারা পাহারায় ছিলেন? রক্ষীই বা কী করছিলেন? সিসিটিভিতে নজর পুলিশের, হতে পারে পুনর্নির্মাণ
আনন্দবাজার | ২৮ জুন ২০২৫
কসবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় তদন্তের অন্যতম হাতিয়ার হতে চলেছে সিসিটিভি ফুটেজ। নির্যাতিতার বয়ান অনুযায়ী, তাঁকে প্রথমে ইউনিয়ন রুমে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছিল। তার পর নিয়ে যাওয়া হয় কলেজের রক্ষীর ঘরে (গার্ড রুমে)। সেখানে ধর্ষিতা হন ওই ছাত্রী। ইউনিয়ন রুমের বাইরে একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সূত্রের খবর, তার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া, শুক্রবারই ওই কলেজে গিয়েছিল ফরেন্সিক দল। ঘটনাস্থল থেকে ফরেন্সিক নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ইউনিয়ন রুম এবং রক্ষীর ঘরে কী কী ছিল, ধস্তাধস্তির প্রমাণ রয়েছে কি না, প্রমাণ লোপাটের কোনও চেষ্টা করা হয়েছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ধৃতদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে।
পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২৫ জুন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ৫০ মিনিটের মধ্যে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের ক্যাম্পাসে। নির্যাতিতা ওই কলেজেরই ছাত্রী। তিনি অভিযোগপত্রে তিন জনের নাম উল্লেখ করেছেন। মূল অভিযুক্তকে চিহ্নিত করেছেন ‘জে’ নামে। অভিযোগ, তিনিই প্রথমে ইউনিয়ন রুমের ভিতর তাঁর সঙ্গে ধস্তাধস্তি করেন, পরে রক্ষীর ঘরে নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন। বাইরে সে সময়ে পাহারায় ছিলেন ‘এম’ এবং ‘পি’। অভিযোগ, রক্ষীর ঘরে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার পর রক্ষীকেই বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তিনি ‘অসহায়’ ছিলেন। তাই কোনও সাহায্য করতে পারেননি। অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন নির্যাতিতা। দাবি, অভিযুক্তেরা সকলেই তৃণমূলের ছাত্র পরিষদ টিএমসিপির সঙ্গে যুক্ত। নির্যাতিতা ছাত্রীও ওই কলেজের টিএমসিপির পদে ছিলেন। শাসকদলের ছাত্র পরিষদের নেতা হওয়ায় কলেজে অভিযুক্তদের দাপট ছিল, জানিয়েছেন নির্যাতিতা। অভিযোগ, ধর্ষণের কথা পুলিশকে জানালে তাঁর প্রেমিককে খুন করিয়ে দেওয়া এবং বাবা-মাকে গ্রেফতার করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে নির্যাতিতাকে। অভিযুক্তেরা জানিয়েছেন, এ সব তাঁরা আগেও করেছেন! ইউনিয়ন রুমে তাঁকে হকি স্টিক দিয়ে মারধরের চেষ্টাও করা হয়েছিল, দাবি নির্যাতিতার।
পুলিশ সূত্রে খবর, কলেজ ক্যাম্পাসের মোট দু’টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এই ঘটনায় তদন্তের কাজে লাগতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলতে পারে ওই ফুটেজগুলি থেকে। ইউনিয়ন রুমের বাইরে সে দিন রাতে কারা দাঁড়িয়ে ছিলেন, কী করছিলেন, রক্ষী কোথায় ছিলেন, এই সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। নির্যাতিতার বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে। আরও কেউ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত কি না, খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার পর কসবা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রী। তাঁকে পার্ক সার্কাসের কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শারীরিক পরীক্ষার জন্য। তার পর ২৬ তারিখ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয় দু’জনকে। তৃতীয় অভিযুক্ত গ্রেফতার হন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। অভিযুক্তদের শুক্রবার আলিপুর আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। তাঁদের আপাতত চার দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।