• জ্যান্ত মুরগি বেছে দিন, পাবেন গরমাগরম ঝোল
    এই সময় | ২৮ জুন ২০২৫
  • পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার

    ধোঁয়া ওঠা ভাত। সঙ্গে গরম গরম মুরগির ঝোল। যে-সে ঝোল নয়, একেবারে ইউনিক রেসিপি। এটাও আর নতুন কী বিষয়! ইউনিক এটাই, এখানে এলে জ্যান্ত মুরগি বেছে দিতে পারবেন। সেই মুরগি কিছুটা সময়ের মধ্যে রান্না করে পরিবেশন করা হবে আপনার পাতে।

    হাসিমারা-আলিপুরদুয়ার ৩১/সি জাতীয় সড়কের গরম বস্তির ধারে একটি ধাবায় এলে চমক লাগবে। ধাবার সামনে একটি পেল্লায় বাঁশের খাঁচা রাখা আছে। সেখানে রাখা থাকে বিভিন্ন বনবস্তি থেকে সংগ্রহ করে আনা খুঁটে-খাওয়া দেশি মুরগি।

    সেখান থেকে মুরগি পছন্দ করে ওজন দেখে নিলেই গ্রাহকদের প্রথম পর্বের কাজ শেষ। তারপর ধাবার কর্মীরাই ওই মুরগি কেটে-ছেঁটে সাফসুতরো করে ফেলেন। এর পরে সম্পূর্ণ বাটা মশলায় টাটকা ঝোল তৈরি করে পরিবেশন করা হয়।

    এই রেসিপিতে শুকনো লঙ্কা কিংবা কোনও গুঁড়ো মশলা ব্যবহারের রীতি নেই। ধাবাটিকে প্রাথমিক অবস্থায় দেখে পছন্দ হওয়ার কথা নয়। চাকচিক্যের কোনও প্রলেপ নেই। কিন্তু ওই মুরগির ঝোল দিয়ে গরম ভাতের একটি গ্রাস মুখে পড়ামাত্রই টের পাওয়া যায় রান্নার কারসাজি।

    ঝালের সঙ্গে ঈষৎ মিষ্টি মাখানো অন্যরকম স্বাদ মুখে লেগে থাকে ভাতের শেষ গ্রাস পর্যন্ত। এক কেজি মুরগির ঝোল ও এক থালা ভাত-সহ মূল্য চোকাতে হয় ৮৫০ টাকা। পরিমাণ এতটাই যে খেয়েও শেষ করা যায় না।

    উইকডেজ় তো বটেই, উইকএন্ড কিংবা বিশেষ ছুটির দিনে রীতিমতো প্রি-বুকিং করে ওই ধাবার টেবিলে বসতে হয়। তবে রাতে মুরগি ধাবা চালু থাকে না। পোলট্রির মুরগি ধাবায় ঠাঁই পায় না। থাকে না মাছ অথবা পাঁঠার মাংস। শুধু দেশি মুরগির ঝোলের আকর্ষণেই এখানে ছুটে আসেন সবাই।

    এই ধাবার কোনও নামও নেই। মুরগি ধাবা নামেই ডুয়ার্সের মানুষদের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে তার খ্যাতি। বিগত ৪০ বছর ধরে গরম বস্তির রূপন ধর ও তাঁর স্ত্রী বাণী অভিনব ব্যাবসা চালিয়ে আসছেন। হালে ছেলে রাহুলও পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরেছেন।

    রূপন বলেন, ‘বন থেকে কুড়িয়ে আনা কাঠের আগুনে রান্না করা হয়। এর ফলে রান্নায় স্মোক ফ্লেভারটা আসে। তবে রান্নায় ঠিক কী কী মশলা ব্যবহার করা হয়, তা আমরা প্রকাশ্যে আনি না। ওটাই আমাদের জাদুকাঠি। সবার শুভেচ্ছায় মুরগির ঝোল বিক্রি করেই গত ৪০ বছর ধরে সংসার চালিয়ে আসছি।’

    সময়ের সঙ্গেও বিশেষ বদলায়নি এই ধাবা। রাহুল বলেন, ‘গ্রাহকদের চাহিদায় ঠান্ডা জলের জন্য ফ্রিজ এনেছি। পাখাও লাগিয়েছি। কিন্তু লো ভোল্টেজের কারণে বেশিরভাগ সময়েই সে সব থমকে থাকে।’

    ধাবায় যাঁরা খেতে আসেন, তাঁরা প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কোচবিহারের আইনজীবী রথীন দাস বলেন, ‘সময় পেলেই অদ্ভুত স্বাদের মুরগির ঝোলে রসনা তৃপ্তির জন্য এত দূরে ছুটে আসি।’ তুফানগঞ্জের প্রতীক সরকার বলেন, ‘ফুরসত পেলেই আমি বন্ধুদের নিয়ে ছুটে যাই মুরগি ধাবায়।’

  • Link to this news (এই সময়)